বালেশ্বর : এখনও তাজা দুর্ঘটনার ভয়ঙ্কর স্মৃতি। বালেশ্বর ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৯৫ জন মানুষ। এরই মধ্যে সামনে এল মর্মান্তিক তথ্য। এখনও নাকি ৪১টি মৃতদেহ শনাক্তই করা যায়নি। ভুবনেশ্বরে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে সেগুলি রাখা রয়েছে। 


এইমসের অধিকর্তা আশুতোষ বিশ্বাস বলছেন, '৪১টি মৃতদেহের কোনও দাবিদার নেই। অনেকেই আমাদের কাছে আসছেন। আমরা DNA ম্যাচ করে তাঁদের হাতে দেহ তুলে দিচ্ছি। আত্মীয় বা অন্য কোনও দাবিদার যাঁরা মৃতদেহ নিতে আসছেন, তাঁদের মৃতদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া এখনও চলছে। যতদিন না কোনও দাবিদার আসছেন ততদিন এই প্রক্রিয়া চলতে থাকবে।'


গতকাল, শুক্রবারই রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ জানিয়েছিলেন, সিগন্যালিং-সার্কিট-অল্টারেশনে ত্রুটির জেরে ভুল সিগন্যাল দেওয়া হয়। যার জেরে ওড়িশার বালেশ্বরে এই ট্রেন দুর্ঘটনা। তাঁর আরও সংযোজন, 'অসামরিক বিমান মন্ত্রকের আওতায় রেলওয়ে সেফটি কমিশনার বালেশ্বর ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়ে তাদের তদন্ত শেষ করেছে।' এই দুর্ঘটনা নিয়ে রাজ্যসভায় প্রশ্ন তোলেন সিপিআই নেতা জন ব্রিট্টাস ও আপ নেতা সঞ্জয় সিং। তাঁদের প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতেই জবাব দেন রেলমন্ত্রী। 


বালেশ্বরে ৩টি ট্রেনের দুর্ঘটনায় ২৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা হাজারের বেশি। প্রশ্ন ওঠে, এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এত মানুষের মৃত্যু হল কী করে ? রেলের অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস 'কবচ' নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অধীর চৌধুরীরা। গত বছর বাজেট পেশের দিন সাংবাদিক বৈঠকে জলপাইগুড়ি দোমোহনিতে ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে রেলমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন , " ক্ষমতাশালী এলএইচবি কোচ তৈরি করা হচ্ছে এবং সমস্ত পুরানো কোচগুলিকে শীঘ্রই এলএইচবি দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হবে। পরিকাঠামোর উন্নতিতে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।" আর বাজেট প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ শুনিয়েছিলেন রেলের 'কবচ' প্রকল্পের কথা। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, "আত্মনির্ভর ভারত-এর অংশ হিসাবে, ২ হাজার কিলোমিটার নেটওয়ার্ককে 'কবচ'-এর আওতায় আনা হবে। এই প্রযুক্তি নিরাপত্তা ও ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি বিশ্বমানের প্রযুক্তি।" কিন্তু সব আশ্বাসই সার! তার পরেও এড়ানো যায়নি ভয়াবহ দুর্ঘটনা!


গত ২ জুন বালেশ্বরের কাছে বাহানাগা বাজারে লাইনচ্যুত হয় চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১৫টি বগি। একই সঙ্গে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি। এক ঝলকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না, কোন কামরা কোন ট্রেনের ! দুর্ঘটনার অভিঘাতে দুমড়ে মুচড়ে তালগোল পাকিয়ে যায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের একের পর এক বগি। এমনকী, কম ক্ষতিগ্রস্ত কামরার ছবি দেখলেও শিউরে উঠতে হয়।