ঢাকা: গত কয়েক মাসে অনেক কিছুই পাল্টে গিয়েছে বাংলাদেশে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ উঠে আসছে লাগাতার, আবার এক এক কের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সব স্মৃতিচিহ্নও মুছে ফেলার অভিযোগ উঠছে। সেই আবহেই দেশের সংবিধান থেকে 'ধর্মনিরপেক্ষ' শব্দটি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব উঠল সেখানে। সাধারণ মানুষ বা কোনও দলের সমর্থকরাই নন শুধু, বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ আসাদুজ্জামান স্বয়ং এই প্রস্তাব দিয়েছেন। (Bangladesh Constitution)
দেশের সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর বৈধতা বিয়ে হাইকোর্টে শুনানি চলছিল। সেই সময় আসাদুজ্জামান সংবিধানকে নতুন করে সংশোধনের পক্ষে, 'ধর্মনিরপেক্ষ' শব্দটি ছেঁটে ফেলার পক্ষে সওয়াল করেন বলে খবর। আসাদুজ্জামান জানান, দেশের সংবিধান থেকে 'ধর্মনিরপেক্ষ', 'সমাজতন্ত্র', 'বাঙালি জাতীয়তাবাদ'-এর মতো শব্দ বাদ দেওয়া উচিত। সংবিধানে মুজিবকে যে 'জাতির জনক' বলে উল্লেখ করা হয়, তাও হটানোর পক্ষে আসাদুজ্জামান। (Bangladesh News)
আদালতে এদিন আসাদুজ্জামান জানান, এই শব্দগুলিতে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়। বিশেষ করে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনসংখ্যার কথা মাথায় রাখলেও শব্দগুলি খাটে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ থেকে গণভোট সংক্রান্ত বিধি-নিয়মেও সংশোধনের পক্ষে সওয়াল করেন তিনি। আসাদুজ্জামান বলেন, "সংবিধানের ৭ (খ) অনুচ্ছেদের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। সংবিধানের মূল নীতি গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র নয়। আমরা সমাজতন্ত্রকে বাদ দিতে চাইছি। শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান কেউ অস্বীকার করে না। কিন্তু জাতি বিভক্ত, তাই জাতির পিতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা ছিলেন না। সংশোধনীতে ঢোকানো হয়েছে, চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে জোর করে।"
অনুচ্ছেদ ৮ নিয়ে তিনি বলেন, "এখানে ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটি রাখার প্রয়োজন নেই। দেশের ৯০ শতাংশ মুসলিম। আগে যেমন আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা, বিশ্বাসের কথা রাখা ছিল, তা-ই চাইছি। আর ২ (ক)তে বলাই আছে, রাষ্ট্র সব ধর্ম পালনে সমান অধিকার, সমান মর্যাদা প্রদান করবে। অনুচ্ছেদ ৯-তে যে বাঙালি জাতীয়বাদের কথা বলা রয়েছে, তা সাংঘর্ষিক"।
আদালতে এদিন আসাদুজ্জামান বলেন, "ওই সংশোধনী (১৫তম) আবু সৈয়দ, মুগ্ধের মতো শহিদদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে।" এ বছর জুলাই মাসে সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে যাঁরা মারা যান, তাঁদের উল্লেখ করেন আসাদুজ্জামান। ১৫তম সংশোধনী গণতন্ত্রের পরিপন্থী, অবিলমন্বে তা বাতিল করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে গণভোট ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার পক্ষে সওয়াল করেন।
সংবিধানের যে ১৫তম সংশোধনী বাতিলের দাবিতে সরব আসাদুজ্জামান, সেটি ২০১১ সালে, তদানীন্তন হাসিনা সরকারের আমলে হয়। সেবার ওই সংশোধন ঘটিয়ে মুজিবকে জাতির জনকের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। পাশাপাশি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, হিলাদের জন্য সংসদে আসন সংখ্যা বাড়ানোর ব্যবস্থাও করা হয়। সেই সংশোধনীর আইনি বৈধতা নিয়েই এই মুহূর্তে শুনানি চলছে। সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনের জেরে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, সেই নিয়ে এমনিতেই উদ্বিগ্ন আন্তর্জাতিক মহল। সংবিধান থেকে 'ধর্মনিরপেক্ষ' শব্দটি বাদ দেওয়ার পক্ষে যে সওয়াল করেছেন আসাদুজ্জামান, তা-ও চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে।