কলকাতা : সেনাবাহিনীর আশ্বাসই সার। কোথাও জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, কোথাও রাস্তায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে সারি সারি মৃতদেহ। বাংলাদেশজুড়ে নৈরাজ্যের ভয়াবহ ছবি। আতঙ্কে রয়েছেন সে দেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা ! জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাড়িঘর। অত্যচারের নজির বিহীন ছবি বাংলাদেশজুড়ে। মৃত্যুর পরও রেহাই নেই! জুতো দিয়ে মেরে থেঁতলে দেওয়া হচ্ছে মুখ।
একের পর এক হিন্দু মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেছে বেছে হিন্দুদের উপর করা হচ্ছে আক্রমণ। মহিলাদের উপর চলছে অবাধে অত্যাচার। ভাইরাল হয়েছে মহিলাদের আর্ত চিৎকার। মেহেরপুরে এক আওয়ামি লিগ নেতা-সহ হিন্দুদের ৯টি বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঢাকাতেও একাধিক হিন্দু পরিবারের বাড়িঘর ভাঙচুর করে লুঠপাট চালানো হয়েছে।
সোমবার সন্ধেয় মালোপাড়ার ছয়টি হিন্দু বাড়িতে ভাঙচুর চালায় দুষ্কৃতীরা। দিনাজপুর সদর উপজেলায় ফুলতলা শ্মশানঘাট এলাকায় হরিসভা ঘর, দুর্গামন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। বোচাগঞ্জ উপজেলার ঈশানিয়া ইউনিয়নের চৌরঙ্গী বাজারে সংখ্যালঘুদের অন্তত ৪০টি দোকানপাটে ভাঙচুর ও লুঠপাট করা হয়েছে।
সূত্রের খবর এদিন কেন্দ্রীয় সরকারের ডাকা সর্বদল বৈঠকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার বিষয় নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও পরিস্থিতি ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
সংখ্যালঘুদের নিয়ে কী ভাবছে সরকার
বিদেশমন্ত্রীও আশ্বাস দিয়েছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতির উপর আমরা নজর রাখছি। খবর মিলেছে, তাদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়েছে বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সংগঠন। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি আমরা, তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত উদ্বেগ বজায় থাকবে। এদিন বিদেশমন্ত্রী এস জয় শঙ্কররের কাছে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও'ব্রায়েন বলেন, বাংলায় আপনাদের নেতাকে (শুভেন্দু অধিকারী) সংযত করুন এবং তাঁকে আজেবাজে কথা বলতে নিষেধ করুন।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগ বিদেশেও
বাংলাদেশে নৈরাজ্য ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার নিয়ে চিন্তিত আন্তর্জাতিক মহল। ব্রিটেনের বিদেশসচিব ডেভিড ল্যামি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই হিংসা বন্ধে সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মিশনগুলোর রাষ্ট্রদূতেরা সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর উপাসনালয় ও লোকজনের ওপর হামলার খবরে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন। অন্যদিকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হিংসা ও হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে, ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা হচ্ছে। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের যাঁরা রয়েছেন তাঁদের বাড়িতেও হামলা হচ্ছে। এটা সমর্থন করি না।
সম্প্রীতির ছবি দেখা গেছে বাংলাদেশের গাজিপুরে। সেখানে বিভিন্ন মন্দিরে পাহারা দিচ্ছেন ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের সদস্যরা।
সাড়ে তেরো শতাংশ থেকে কমতে কমতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অর্থাৎ হিন্দুর সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে
মাত্র আট শতাংশে। এবার তাদের অস্তিত্বও সঙ্কটে ।
আরও পড়ুন, কেন বাংলাদেশের মানুষ ভারতের প্রতি 'ক্ষুব্ধ'? দিল্লিকে নীতি পরিবর্তন করতে বললেন মহ. ইউনুস
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে