নয়াদিল্লি : বাংলাদেশে অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-নাগরিকরা চায়, নতুন সরকারে সমাজের সর্বস্তরের প্রতিনিধিত্ব থাকুক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম জানান, তাঁরা চান, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত হোক বাংলাদেশের তদারকি সরকার। কিন্তু ইউনুস কী চান, জানালেন এবিপি লাইভের প্রতিনিধি নয়নিমা বসুকে।


ইউনুস নাকি দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।  তাই কি? প্যারিস থেকে এবিপি লাইভের সঙ্গে কথা বললেন নোবেল জয়ী। ইউনুস বলছেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করার একমাত্র সমাধান হল গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়া। তিনি চান দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক।  হাসিনার শাসনের দীর্ঘকাল এমনভাবে ভোট হত না, অভিযোগ অর্থনীতিবিদের। 


৮২ বছরের নোবেলজয়ী জানিয়েছেন, তিনি এই বিষয়ে ভারতের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নন।  বাংলাদেশের প্রতিবেশী হয়েও  ছাত্র আন্দোলনের বিষয়টিকে ভারত বাংলাদেশের "অভ্যন্তরীণ বিষয়" বলে অভিহিত করেছে। আর তাতেই হতাশ তিনি। ইউনুসের কথায় নরেন্দ্র মোদির সরকার এমন একজনকে সমর্থন করেছে, যিনি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছেন। ইউনুসের কথায়, "আমি খুবই আহত হয়েছিলাম, যখন ভারত ছাত্র আন্দোলনকে বলল , এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা এই বিষয়ে কিছু করতে পারব না। আমি বললাম, আসুন, আমাদের নির্বাচনে অংশ নিন। যখন মানুষ রাস্তায় এসে আন্দোলনে নামলে, তাদের ওপর গুলি চালানো হচ্ছে, আপনাদের কোনও ভূমিকা নেই ! আমরা সারা বিশ্বের কাছে আর্জি জানাচ্ছিলাম, বাংলাদেশের নিরীহ ছেলেদের তাদের সরকারই গুলি করে মারছে, আমাদের সাহায্য করুন, ভারত বলে দিল , এটা একটা অভ্যন্তরীণ বিষয় ! "


বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ইউনুস মাইক্রোফিনান্স নিয়ে তাঁর গবেষণার জন্য ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, পুরো বিষয়টিতে  ভারতের নীরবতা বাংলাদেশী জনগণকে ক্ষুব্ধ করেছে। নয়াদিল্লি হাসিনার কাজের বিরুদ্ধে কোনো সরকারি অবস্থান নেয়নি। 


"আপনার প্রতিবেশীর বাড়িতে আগুন লাগলে আপনি বলতে পারেন না যে, এটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার । এতে যদি আমাদের ক্ষতি হয় , তাহলে তা আপনাকেও আঘাত করবে। কারণ বাংলাদেশে যদি  বিশৃঙ্খলা ও হিংসা ছড়ায়, তাহলে তা সীমান্ত জুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। এটা তখন আটকানো যাবে না ”। ইউনুস নিজে বাংলাদেশের শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে এই বছর জানুয়ারিতে কারাগারে দণ্ডিত হয়েছিলেন।


ইউনুসের অভিযোগ, "ভারত শুধুমাত্র একজন ব্যক্তিকে সমর্থন করতে চেয়েছিল" বরং ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যখন বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তখন  নয়াদিল্লির একটি "ভূমিকা" ছিল । ভারতই হাসিনাকে সর্বাগ্রে অভিননন্দন জানিয়ে এসেছে। 


অর্থনীতিবিদের অভিযোগ, ভারত "দুর্ভাগ্যবশত" হাসিনার প্রতিটি নির্বাচনে কারচুপি করার পদ্ধতিকে সমর্থন করে। আর এ জন্যই বাংলাদেশের জনগণ ভারতের প্রতি ক্ষুব্ধ।   তবে,ইউনুস উল্লেখ করেন, ভারত আমাদেল প্রতিবেশী দেশ। ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সংযুক্ত। তাই ঢাকা এবং নয়াদিল্লি "বেস্ট ফ্রেন্ড" হতে পারে।


“বাংলাদেশের ভারতের সমর্থন দরকার। আমাদের সব  ভারতীয়দের কাছ থেকে সমর্থন প্রয়োজন। একযোগে আমরা ভারত এবং বাংলাদেশ সেতুবন্ধন করতে পারি। আমরা একে অপরের খুব কাছাকাছি।” মনে করছেন ইউনুস। 


এদিকে, সীমান্তে উত্তেজনা আটকাতে  সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী (বিএসএফ) কারি করেছে উচ্চ সতর্কতা। সোমবার বাংলাদেশের সঙ্কট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক করেন। আর তারপর নয়াদিল্লি বাংলাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। 


ইউনুসের কথায় ভারত  বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করুক,  বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নয়। অনুগ্রহ করে ভারত তার নীতি পরিবর্তন করুক, মত ইউনুসের।  তিনি আরও বলেন, আমরা চাই না ভারত আমাদের শত্রু হোক। আমরা সবচেয়ে কাছের বন্ধু হতে চাই... তাই ভারত তার নীতি পরিবর্তন করুক এবং আমরা কোথায়  তা বোঝার জন্য় আমাদের একযোগে চেষ্টা করা দরকার । কেন আমরা কোনও ব্যক্তির সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখব? কেন দেশের সঙ্গে নয় ?” ।


ইউনুসের মতে, “বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসতে হবে। প্রত্যেক নাগরিকেরই নিজেদের মত প্রকাশের, নিজস্ব রাজনৈতিক দল গঠন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়াই একমাত্র সমাধান। আপনি বন্দুক দিয়ে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না। মানুষকে মিথ্যা অভিযোগ করে জেলে ঢোকাতে পারবেন না। গণতন্ত্র ও নির্বাচনে ফিরে আসতে হবে। আর আজ সেই দরজাটা খুলে দেওয়া হয়েছে। ” 


২০০৭ সালে একবার ‘নাগরিক শক্তি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন ইউনুস। কিন্তু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার  সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। ইউনুস আরও বলেন, “আমি রাজনীতি থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করব। আমি একজন রাজনীতিবিদ নই, আমি রাজনীতিতে জড়াতে চাই না …আমি এই ধরনের কাজের জন্য উপযুক্ত নই।'


আরও পড়ুন :


প্রতিবছর ২ লক্ষেরও বেশি হিন্দু বাংলাদেশ ছাড়েন, এখন কি আরও বিপদের মুখে সে-দেশের হিন্দুরা? 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।