অর্ণব মুখোপাধ্যায় : বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর বিল্ডিংয়ের ৬ তলায় আগুন লাগে রাত ১টা ৫০ মিনিট নাগাদ। আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘটনাস্থলে যায় দমকলের ১৯টি ইঞ্জিন। আগুন নেভাতে গিয়ে এক দমকলকর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তরফে ১.৫২ মিনিট নাগাদ খবর দেওয়া হয় দমকল বাহিনীকে। আর ১.৫৪ মিনিট নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলবাহিনী। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে সকাল ৮টা ১৫ মিনিট নাগাদ। প্রায় সারারাত ধরে আগুনে জ্বলেছে বাংলাদেশের সচিবালয়। ৬ তলায় আগুন লাগলেও তা ছড়িয়ে পড়ে উপরের ৭ এবং ৮ তলায়। এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর উঠে আসছে একাধিক প্রশ্ন।
প্রথমত বাংলাদেশের সচিবালয় অত্যন্ত সুরক্ষিত জায়গা। ভিতরে দমকলের গাড়ি রাখার জায়গাও রয়েছে। তার পরেও কীভাবে এমন বিধ্বংসী আগুন লাগল এবং তা নিয়ন্ত্রণে আনতে এত দীর্ঘ সময় লাগল তা নিয়েই দানা বাঁধছে রহস্য। সচিবালয়ের বাঁদিক ও ডানদিক, অর্থাৎ দু'দিকে আগুন লেগেছে। বিল্ডিংয়ের দু'দিকে কীভাবে একসঙ্গে আগুন লাগল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। সচিবালয়ের একদিকে ছিল ফিনান্সিয়াল বিভাগ। অন্যদিকে লোকাল ডিপার্টমেন্ট। এই দুই বিভাগে ছিল অনেক গুরত্বপূর্ণ নথি। তা নষ্ট করতেই কি আগুন লাগানো হয়েছে? উঠছে প্রশ্ন। কারণ বিল্ডিংয়ে পরপর আগুন ছড়িয়ে পড়েছে তা নয়। একসঙ্গে দু'দিকে আগুন লেগেছে।
সচিবালয়ের এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে অনেক তথ্য। এটা দুর্ঘটনা নাকি নশকতার ছক রয়েছে, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নথি কী কী থাকতে পারে তা স্পষ্ট নয়। তবে এখন বাংলাদেশের জেল থেকে যে বিভিন্ন অপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে কাদের ছাড়া হচ্ছে, কারা রয়েছে, সেই সংক্রান্ত তথ্য থাকতে পারে। আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য থাকতে পারে। অনেকের মতে এইসব তথ্য পুড়িয়ে দেওয়ার জন্যই আগুন লাগানো হয়েছে। এই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ইতিমধ্যেই তারা জানিয়েছে একটি তদন্তকারী কমিটি গঠন করা হয়েছে। ক্যাবিনেট সেক্রেটারি বা হোম সেক্রেটারির আওতায় এই কমিটি গঠন করা হবে।
বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে ওই এলাকায় এমন অনেক সন্দেহভাজনকে দেখা গিয়েছে যাদের বিরুদ্ধে অতীতে আগুন লাগানোর অভিযোগ রয়েছে। তত্ত্ববধায়ক সরকারের গঠন করা কমিটি তদন্ত শুরু করলে কোন কোন নথি পুড়ে গিয়েছে, এর পাশাপাশি নথি পোড়ানোর জন্যই আগুন লাগানো হয়েছে কিনা, এটা দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা, এর পিছনে কারা যুক্ত - এইসব বিষয় সংক্রান্ত আসল তথ্য, সত্য আদৌ প্রকাশ্যে আসবে কিনা, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে এর মধ্যেই। ঢাকার সেগুনবাগিচায় সচিবালয়ে আগুন লেগেছিল গভীর রাতে।