পার্থপ্রতিম ঘোষ, ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী ও প্রসেনজিৎ সাহা, ঢাকা : বাংলাদেশের ইউনূস সরকারের ভারত-বিদ্বেষী অবস্থান দিনে দিনে স্পষ্ট হচ্ছে। আর ঠিক এই পরিস্থিতিতেই ঢাকায় পাকিস্তানের কূটনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করলেন খালেদা জিয়া। যা দেখে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, খালেদা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন, বাংলাদেশ যেভাবে পাক-জঙ্গিদের আখড়া হয়ে উঠেছিল, সেই অধ্য়ায় কি আবার ফিরতে চলেছে ?
যে দেশের বর্বর অত্য়াচার থেকে মুক্তি পেতে, পৃথক বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল, তার নাম পাকিস্তান। আর যে দেশের সাহায্য় ছাড়া, স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম সম্ভব ছিল না, তার নাম ভারত। কিন্তু, আজকের বাংলাদেশের কট্টরপন্থীরা সেই ইতিহাস অবলীলায় ভুলেছে। প্রতিদিন ভারতের বিরুদ্ধে বিষ উগরে দিচ্ছে বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনূস সরকার। আর এই গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে অত্য়ন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে ঢাকায় পাকিস্তানের কূটনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করলেন বিএনপি-র প্রধান ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
পদ্মাপাড়ে মৌলবাদীরা হিন্দুদের মেরেধরে, তাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে অকথ্য় অত্য়াচার চালানো হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাতে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। প্রায় ঘণ্টাখানেক এই বৈঠক চলে। যা দেখে অনেকে বলছেন, এই ছবিতেই স্পষ্ট, ভারত-বিদ্বেষের সুযোগ নিয়ে, বাংলাদেশে কলকাঠি নাড়তে শুরু করে দিয়েছে পাকিস্তান।
হাসিনা সরকারের পতনের পর, খালেদা জিয়া গৃহবন্দি দশা থেকে মুক্তি থেকেই যে আশঙ্কাটা মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছিল। কারণ, শেখ হাসিনার ভারতের সঙ্গে যতটা সুসম্পর্ক ছিল, ঐতিহাসিকভাবে BNP ও জামাত ঠিক ততটাই পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ। ২০০১ থেকে ২০০৬ অবধি খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ভারত-বিরোধী শক্তিগুলোর আখড়া হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। সেই সময় ঢাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছিল পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা ISI। ভারতে একের পর এক জঙ্গি হামলার ছক যাদের মাথা থেকে বেরোত। জিয়ার জমানাতেই উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক জঙ্গিগোষ্ঠী তাদের বেস ঢাকায় সরিয়ে নিয়ে যায়। তারপর ISI-এর ছত্রছায়া থেকে ভারতের ওপর আঘাত হানতে শুরু করে। ISI মদতপুষ্ট জঙ্গিরা ভারতে ঢুকত বাংলাদেশের রাস্তা দিয়ে। তারপর হামলা চালিয়ে পালাত সেই বাংলাদেশে। হাসিনা সরকারের পতনের পর, এখন সেই খালেদা জিয়া আবার সক্রিয়। আর তার ফল যা হওয়ার, ঠিক তাই হচ্ছে। বাংলাদেশ চাইছে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক মসৃণ করতে। যার অন্য়তম প্রমাণ হল, ১৩ নভেম্বর পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে পণ্যবাহী জাহাজের সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে আসা। ১৯৭১ সালের পর এই প্রথম কোনও পণ্যবাহী জাহাজ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে এল। শুধু পাকিস্তান নয়, চিনও এখন বাংলাদেশে জমি তৈরি করতে সক্রিয়। হাসিনা সরকারের পতনের পর অক্টোবর মাসে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন চিনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে, ফের একবার বাংলাদেশের মাটিকে কাজে লাগিয়ে কি ভারতকে কোণঠাসা করতে চাইছে পাকিস্তান ও চিন ? একাত্তরে বাংলাদেশের দুর্দিনে পাশে ছিল ভারত। কিন্তু, সেই বন্ধুই আজ ভারতের ক্ষতি করতে মরিয়া। এই প্রেক্ষাপটে মোদি সরকার কি আন্তর্জাতিকস্তরে বাংলাদেশের ওপর চাপ তৈরি করবে ?