ঢাকা: সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনে প্রাণ গিয়েছে শতাধিকের। সেই আবহেই সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিল বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট। সংরক্ষণ পুরোপুরি তুলে না দিলেও, সংশোধন ঘটানোর পক্ষে নির্দেশ দিল আদালত। বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী পরিবারের ছেলেমেয়েরা সরকারি চাকরিতে ৫ শতাংশ সংরক্ষণ পাবেন। অন্যরা পাবেন ২ শতাংশ সংরক্ষণ। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট পরিষ্কার জানিয়েছে, সরকারি চাকরিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগই হবে মেধার ভিত্তিতে। তিন মাসের মধ্যে এ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। (Bangladesh Supreme Court) 


গত মাসে ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ ফেরানোর পক্ষে যে রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট, সেই রায়কে এদিন বেআইনি বলল সুপ্রিম কোর্ট। সংরক্ষণ যদিও পুরোপুরি তুলে দেয়নি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু হাইকোর্টের আগের নির্দেশকে বেআইনি আখ্যা দিয়েছে। সংবাদ সংস্থা AFP-কে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিনউদ্দিন জানিয়েছেন, হাইকোর্টের নির্দেশ বেআইনি ছিল বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পরিবারের ছেলেমেয়েরা চাকরিতে ৫ শতাংশ সংরক্ষণ পাবেন। অন্য বিভাগে আরও ২ শতাংশ সংরক্ষণ থাকবে।" (Bangladesh Anti Quota Protests)


পাশাপাশি, এদিন আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের আবারও ক্লাসরুমে ফিরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আগামী ৭ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্টে সংরক্ষণ নিয়ে শুনানির কথা ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনা করে এগিয়ে আনা হয় শুনানি। যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, সংরক্ষণ যেহেতু পুরোপুরি উঠল না, তাই আগামী দিনেও সরকারের প্রতি ক্ষোভ থাকবে। এমনকি শেখ হাসিনার সরকার আদালতের নির্দেশ কতটা মানবে, সেইনিয়েও সন্দিহান অনেকে। আদালতের এই রায়ের পরও, এখনও থমথমে পরিস্থিতি বাংলাদেশের। সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ১৩৩ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। সরকারি হিসেব যদিও সামনে আসেনি। দেশের ইন্টারনেট পরিষেবাও সম্পূর্ণ বন্ধ। এমনকি ফোনের নেটওয়র্কও মিলছে না বলে খবর।



আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: বাংলাদেশের মানুষ দরজায় কড়া নাড়লে আশ্রয় দেব: মমতা


বাংলাদেশে সংরক্ষণ বিরোধী যে আন্দোলন চলছে, তার সঙ্গে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি যোগ রয়েছে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ নীতি চালু করেন, যার আওতায় সরকারি চাকরিতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পরিবারকে ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সংরক্ষণের অন্তর্ভুক্ত করা হয় দেশের অন্য নাগরিকদেরও। মহিলা এবং অনগ্রসর শ্রেণির জন্য ১০ শতাংশ করে সংরক্ষণ আনা হয়। জনজাতি সম্প্রদায়ের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষণ চালু হয় সেদেশে। অর্থাৎ ৫৬ শতাংশ পদই সংরক্ষিত, জেনারেল ক্যাটেগরির জন্য রাখা হয় ৪৪ শতাংশ।


২০১৮ সালেও এই সংরক্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তেতে ওঠে বাংলাদেশ। অভিযোগ ওঠে, শেখ হাসিনার দল আওয়ামি লিগ যেহেতু মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল, তাই দলের অনুগতরাই সংরক্ষণের সুবিধা ভোগ করেন। এতে মেধার প্রতি সুবিচার হয় না। মোট সংরক্ষণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানান আন্দোলনকারীরা।  সেই সময় চার মাস ধরে চলে আন্দোলন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তাই সাময়িক সংরক্ষণ বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু গত ৫ জুন হাইকোর্ট সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ ফেরানোর পক্ষে রায় দেয়। এদিন হাইকোর্টের সেই রায়কেই বেআইনি আখ্যা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।