নয়াদিল্লি: শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কেটে গিয়েছে সাত মাস। সেই আবহে বাংলাদেশে কি নতুন করে অভ্যুত্থান ঘটার আশঙ্কা। পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এক সেনা আধিকারিক এই পরিকল্পনা করছেন বলে অভিযোগ। বিষয়টি টের পেতেই ওই সেনা আধিকারিককে নজরবন্দি করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হল। (Bangladesh News)
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জমানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটানোর ষড়যন্ত্র চলছিল বলে জানা গিয়েছে। অভিযোগের তির কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল শোনা যাচ্ছে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়জুর রহমানের বিরুদ্ধে। ওয়াকারকে হটিয়ে ফয়জুর নিজে সেনার সর্বাধিনায়ক হওয়ার ছক কষছিলেন। সেই নিয়ে সমর্থন জোগাড়েও নেমে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু ঠিক সময়ে বিষয়টি ধরে ফেলেন ওয়াকার। (Bangladesh Army Officer on Surveillance)
ভারতের একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ওয়াকারকে সরাতে সেনার শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠকও করেন ফয়জুর। সেই বৈঠকের ব্যাপারে ওয়াকারকে কিছু জানানো হয়নি। কিন্তু ওই বৈঠকে যথেষ্ট সমর্থন জোগাড় করতে পারেননি ফয়জুর। আর তাতেই চক্রান্তের পর্দাফাঁস হয়ে যায়। বর্তমানে গোয়েন্দা সংস্থা Directorate General of Forces Intelligence in Bangladesh (DGFI)-এর নজরবন্দি করে রাখা হয়েছে ফয়জুরকে।
এমনিতেই জামাত সমব্যথী হিসেবে পরিচিত ফয়জুর। আবার পাকিস্তানের সঙ্গেও তাঁর সংযোগ পাওয়া যায়। ২০২৫ সালের প্রথম দু’মাসে তিনি জামাত নেতৃত্ব এবং পাকিস্তানি প্রতিনিধিদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন বলে খবর। এই বৈঠকের খবর ওয়াকারের কাছে ছিল না। ওয়াকার বিদেশ সফরে যাওয়ার পর থেকেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত করার পরিকল্পনা শুরু হয়। ৭ মার্চ রাতে ঢাকায় তাঁর বিমান নামলে সঙ্গে সঙ্গে ওয়াকারকে গ্রেফতারি অথবা কনভয়ে হামলা চালিয়ে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল ফয়জুরের।
সেই মতো সমর্থন জোগাড়ে ডিভিশন কম্যান্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ফয়জুর। ফয়জুর সেখানে সকলের সমর্থনও পাননি, পাশাপাশি, সেনাপ্রধানের সেক্রেট্যারিয়ট বৈঠকের কথা জেনে যায়। এর পরই নজরবন্দি করে ফেলা হয় ফয়জুরকে।
সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলন ঘিরে গত বছর তেতে ওঠে বাংলাদেশ। সেই আন্দোলন ক্রমশ হিংসাত্মক আকার ধারণ করে এবং শেষ পর্যন্ত পতন ঘটে হাসিনা সরকার। এর পর নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলেও, শান্তি ফেরেনি বাংলাদেশে। বরং সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন বেড়েছে বলে অভিযোগ সামনে এসেছে। দেশে ইসলামি শাসন কায়েম হওয়ার রাস্তা প্রশস্ত হচ্ছে বলেও উঠেছে অভিযোগ। সেই নিয়ে নিজের মতামত জানিয়েছিলেন ওয়াকারও। রাজনৈতিক অস্থিরতাকে অশান্তির জন্য দায়ী করেন তিনি। সেই আবহেই সেনা আধিকারিককে নজরবন্দি করে রাখার বিষয়টি সামনে এল।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশে মিছিল বের করে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর। বাংলাদেশে ইসলামি শাসন কায়েমের দাবিতে, গোটা দেশে শরিয়ৎ আইন কার্যকর করার দাবিতে পথে নামে তারা। মিছিলে শোনা যায় ‘স্বাধীনতার একটাই পথ, খিলাফৎ খিলাফৎ’, ‘নারায়ে তকবির, আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি। কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে, লাঠিচার্জ করে সেই মিছিল ছত্রভঙ্গ করলেও, গোটা ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশে জঙ্গি সংগঠনগুলি নতুন করে মাথাচাড়া দিলেও, তাদের হেলদোল নেই বলে ওঠে অভিযোগ।