কলকাতা: প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে আপাতত ভারতে রয়েছেন বাংলাদেশের সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু সোমবার সকাল থেকে ঠিক কী হয়েছিল? এমন কোন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন শেখ হাসিনা? শেষ মুহূর্তে কোন পদক্ষেপ করতে চেয়েছিলেন তিনি? সেনা ও পুলিশ কর্তাদেরই বা কী নির্দেশ দিয়েছিলেন? 


কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন। ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছিল শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে গণ আন্দোলনে। যা শেষপর্যন্ত সামাল দিতে পারেননি শেখ হাসিনা!। যার জেরে সোমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়তে হয়েছে শেখ হাসিনাকে। কিন্তু সূত্র বলছে, পদত্যাগের কিছুক্ষণ আগে অবধি অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও আরও রক্তপাতের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া ছিলেন তিনি। কেমন ছিল শেখ হাসিনার দেশত্যাগের আগের কয়েক ঘণ্টা? 'গণভবন' থেকে 'বঙ্গভবন' কী কী ঘটেছিল সেইসময়?


ঠিক কী হয়েছিল?


বাংলাদেশের দৈনিক প্রথম আলো সূত্রে খবর, সরকারবিরোধী আন্দোলন হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে তা দমানোর জন্য আওয়ামি লিগের কর্মী-সমর্থকদের সশস্ত্র অবস্থায় নামিয়ে দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়। রবিবার সারা দেশে ব্যাপক সংঘর্ষ ও প্রাণহানি ঘটে। সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে রবিবার রাতে শেখ হাসিনার এক উপদেষ্টা-সহ কয়েকজন তাঁকে পরামর্শ দেন, সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে। কিন্তু কোনওমতেই রাজি হননি তিনি। উল্টে সোমবার থেকে কার্ফু আরও কড়া করতে বলেন। সেইমতো সোমবার সকাল থেকে সেই উদ্যোগ নেওয়া হলেও, সকাল ৯টার পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনকারীরা বড় সংখ্যায় জমায়েত হতে শুরু করে। সকাল দশটার পরে, ঢাকার বিভিন্ন অংশে কার্ফু ভেঙে এগিয়ে যেতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। প্রথম আলো সূত্রে খবর, সোমবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বাংলাদেশ সেনার তিন বাহিনীর প্রধান এবং পুলিশের IGP-কে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠানো হয়। সূত্রের খবর, শেখ হাসিনা ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, আন্দোলনকারীরা নিরাপত্তারক্ষীদের সাঁজোয়া গাড়িতে উঠে পড়ছেন, সামরিক যানে উঠে পড়ছেন, তাও সেনা কেন আরও কঠোর হচ্ছে না। IGP তখন হাসিনাকে জানান, পুলিশের পক্ষে আর বেশি সময় এরকম কঠোর অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব নয়।

বৈঠকে উপস্থিত শীর্ষকর্তারা হাসিনাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, বলপ্রয়োগ করে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। কিন্তু সূত্রের দাবি, কারও কোনও কথাই শুনতে চাইছিলেন না তিনি। কিন্তু সময় যত এগোচ্ছিল ততই রাজপথে আন্দোলনকারীদের সংখ্য়া বাড়ছিল। এদিকে, শেখ হাসিনা কোনও কথা শুনতে না চাওয়ায়, তাঁর বোন শেখ রেহানার সঙ্গে কথা বলেন সেনা ও পুলিশের কর্তারা। তাঁকে শেখ হাসিনাকে বোঝানোর অনুরোধ জানানো হয়। সূত্রের খবর, বোনের সঙ্গে কথা বলার পরেও, ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া ছিলেন হাসিনা। এরপর বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে কথা বলেন এক শীর্ষ কর্তা। তারপরই পরিস্থিতির বদল হয়। ছেলের সঙ্গে কথা বলার পর পদত্যাগ করতে রাজি হয়ে যান হাসিনা।

বাংলাদেশী দৈনিক প্রথম আলো সূত্রে দাবি,  প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে রাজি হওয়ার পর, জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ রেকর্ড করাতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু গোয়েন্দা সূত্রে বলা হয়, ৪৫ মিনিটের মধ্যে আন্দোলনকারীরা গণভবনে ঢুকে পড়তে পারে। তাই ভাষণ রেকর্ড করতে গেলে সেখান থেকে বেরনোর সময় নাও পাওয়া যেতে পারে। এরপরই আর ভাষণ রেকর্ডের সময় না দিয়ে শেখ হাসিনাকে গণভবন ছাড়ার জন্য ৪৫ মিনিট সময় বেঁধে দেওয়া হয়। শুরু হয় দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি। ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে তেজগাঁওয়ের পুরনো বিমানবন্দরের হেলিপ্যাডে যান শেখ হাসিনা। সেখানে তাঁদের মালপত্র হেলিকপ্টারে ওঠানো হয়। সেখান থেকে সোজা বঙ্গভবনে চলে যান বাংলাদেশের সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। সেনাপ্রধানের উপস্থিতিতে পদত্যাগের আনুষ্ঠানিকতা সেরেলসোমবার বেলা আড়াইটে নাগাদ ছোটবোনকে নিয়ে ভারতের উদ্দেশে রওনা দেন শেখ হাসিনা।

সূত্রের খবর, সোমবার দুপুর ৩টে নাগাদ ভারতীয় বায়ুসেনার র‍্যাডারে ধরা পড়ে, বাংলাদেশ থেকে একটি low-flying aircraft ভারতের আকাশসীমায় ঢুকেছে। বাংলাদেশ বায়ুসেনার সেই C-130 হারকিউলিস বিমানে ছিলেন হাসিনা ও তাঁর বোন রেহানা। সংবাদসংস্থা সূত্রে খবর, তাঁদের নিরাপত্তার স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গের হাসিমারা বিমানঘাঁটি থেকে ১০১ স্কোয়াড্রনের দুটি রাফাল যুদ্ধবিমান বিহার ও ঝাড়খণ্ডের আকাশে উড়েছিল। পুরো পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছিলেন সেনাবাহিনী ও বায়ুসেনার পদস্থ অফিসাররা। শেষ অবধি বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে গাজিয়াবাদের হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে শেখ হাসিনার বিমান। এরপর থেকে সেখানেই আছেন বাংলাদেশের সদ্য় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। এরপর কোথায়?এখনও অজানা। তাঁকে নিয়ে যে বিমান ভারতে এসেছিল, তা বাংলাদেশে ফিরে গেছে। রয়ে গেছেন হাসিনা।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


আরও পড়ুন: Bangladesh News: টানা ১৫ বছর ক্ষমতায়, কেন হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে এই পরিমাণ রাগ জমেছিল?