নয়াদিল্লি: কে বলে যুদ্ধ মানে শুধু প্রাণহানি, সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি? মানবিক মূল্যবোধও কি এই সময়ে প্রশ্নের মুখে দাঁড়ায় না? নোজেইমা হুসেইনোভার  নামে এক তরুণীর কাণ্ডকারখানায় এই নিয়ে ফের তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। চলতি ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় 'হলোকস্ট'-এর অনুষঙ্গ টেনে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়েছিলেন নোজেইমা। সেখান থেকে তুমুল বিতর্ক। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে চাকরি খোয়ান ওই তরুণী। কিন্তু কী এমন পোস্ট দিয়েছিলেন তিনি?


ইহুদিবিদ্বেষ?
হালে গাজা স্ট্রিপের একটি হাসপাতালে বিস্ফোরণের ঘটনায় ইজরায়েলের দিকে আঙুল তুলেছিল হামাস। দু'তরফের মধ্যে ধুন্ধুমার যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে এভাবে হাসপাতালে হামলার অভিযোগ ওঠায় একাধিক আন্তর্জাতিক মঞ্চের সমালোচনার মুখে পড়তে হয় ইজরায়েলকে। যদি বেঞ্জামিন নেতানইয়াহুর সরকার সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে। পরে শোনা যায়, হামাসের অনুসারী সংগঠন ইসলামিক জেহাদ এর জন্য দায়ী। আসল দায় কার, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। তা সত্ত্বেও নোজেইমা সেই ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে অ্যাডলফ হিটলারের নাৎসি নির্যাতনের ইতিহাস মনে করিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল এক্সে লেখেন, 'সন্দেহাতীত ভাবে এই কারণেই এদের নিকেশ করতে চেয়েছিল হিটলার।' এর পর কার্যত ওলোট-পালোট হয়ে যায় এক্স (অতীতে ট্যুইটার) প্ল্যাটফর্ম। ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ ওঠে ব্যাঙ্ককর্মীর বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ককে ট্যাগ করে কেউ লেখেন,'এই জঘন্য ইহুদিবিদ্বেষী আপনাদের কর্মী?' তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে তরুণীকে বরখাস্ত করে ব্যাঙ্কটি। সে কথা সোশ্য়াল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে জানানোও হয়। বার্তাটি স্পষ্ট, 'আমরা ইহুদিবিদ্বেষ এবং সব ধরনের বিদ্বেষমূলক বার্তার কড়া নিন্দা করি। কোনও ভাবেই এগুলিকে সমর্থন করে না আমাদের ব্যাঙ্ক।'


বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়...
ওয়াকবিহাল মহলের বক্তব্য, নোজেইমার এই প্রতিবাদ বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের কথাই ধরা যাক। হালেই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু পড়ুয়া হামাসের আগ্রাসনের জন্য ইজরায়েলেকে দায়ী করে একটি চিঠি সই করেন। তাতে বলা ছিল, হঠাৎ করে এই হামলা করেনি হামাস। ইজরায়েলি সরকার গত দু'দশক যাবৎ যে ভাবে প্যালিস্তিনীয়দের 'ওপেন এয়ার প্রিজন'-এ রেখে এসেছে, তারই প্রতিবাদে এউ হামলা। হার্ভার্ডের পড়ুয়াদের এই চিঠির পর থেকেই একাধিক উদ্যোগপতি তাঁদের স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করেন বলেও শোনা যায়। তবে নোজেইমার এই মন্তব্য নাৎসি ভয়াবহতার যে পর্যায়কে মনে করিয়ে দিয়েছে, তা গোটা মানবজাতির পক্ষেই অত্যন্ত যন্ত্রণার ও লজ্জার। কোনও অবস্থাতেই সেই যন্ত্রণার ইতিহাস সমর্থন করা যায় না, এই কথা মনে করেন ইজরায়েলের কাজকর্মের সমালোচকরাও। সে দিক থেকে তরুণীর মনোভাব কি চরমপন্থী ভাবনারই অন্য একটি দিকের ছবি তুলে ধরে না? প্রশ্ন উঠছেই। যেমন অতীতে উঠেছিল, তেমনই এখনও উঠছে। 
কে বলে যুদ্ধ মানে শুধুই প্রাণহানি, সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি?


আরও পড়ুন:সাংবাদিক সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ, বিস্ফোরক ট্যুইট ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির