ঢাকা: পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার লক্ষণ নেই বাংলাদেশে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর (Hizbut Tahrir)-এর মিছিল ঘিরে এবার ধুন্ধুমার দেখা দিল। বাংলাদেশে ইসলামি শাসন কায়েমের দাবিতে পথে নামল জঙ্গি সংগঠনের সদস্য এবং সমর্থকরা। সেই নিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধল তাদের। লাঠিচার্জ করার পাশাপাশি, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হল। এই ঘটনায় বেশ কয়েক জনকে আটক করা হয়েছে। (Banned Islamist Group Rally in Bangladesh)
শুক্রবার নমাজ শেষ হওয়ার পরই ঢাকায় ‘খিলাফৎ মিছিল’ বের হয়। গত বছর শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এই প্রথম প্রকাশ্য়ে মিছিল বের করল। বাংলাদেশে ইসলামি শাসন কায়েমের দাবি তুলেছে তারা। দাবি গোটা দেশে শরিয়ৎ আইন কার্যকর করার। শুধু তাই নয়, সমস্ত মুসলিম দেশগুলিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে খিলাফৎ কায়েমের দাবিও জানিয়েছে তারা। ইসলামি খিলাফতের শীর্ষে একজনই খলিফা থাকবে বলে দাবি হিজবুতের। (Hizbut Tahrir Group)
শুক্রবার দুপুরে প্রথমে বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটক থেকে মিছিলটি রাস্তায় নামে। হাতে ছিল খিলাফৎ কায়েমের দাবি সম্বলিত ব্যানার, মুখে স্লোগান। শোনা যায় ‘স্বাধীনতার একটাই পথ, খিলাফৎ খিলাফৎ’, ‘নারায়ে তকবির, আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিও। ‘’ পুলিশ বাধা দিতে এগিয়ে গেলেও, বিপুল জনসমাগমে সেই বাধা টেকেনি। এর পর পল্টন হয়ে বিজয়নগরের দিকে এগোয় মিছিল। সেখানে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ, ছোড়া হয় শব্দ-গ্রেনেড।
মতিঝিলের ডেপুটি কমিশনার শাহরিয়র আলি জানিয়েছেন, মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে সফল হয় পুলিশ। এই ঘটনায় বেশ কয়েক জনকে আটক করা হয়েছে। একদিন আগেই যদিও এই মিছিল নিয়ে সতর্ক করেছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ। নিষিদ্ধ সংগঠনের যে কোনও কার্যক্রমই শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে জানানো হয়। তার পরও মিছিল বেরোল কী করে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।'
এ নিয়ে সরব হয়েছেন দেশের প্রাক্তন মন্ত্রী মহম্মদ এ আরাফত। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, 'গত সাত মাসে ইউনূস শুধুমাত্র প্রথন সারির জিহাদিদের জেল থেকে ছেডডে দেননি, তাঁর সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আইনের রক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। ইসলামি চরমপন্থী সংগঠনগুলি তাই নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আকারে এবং শক্তিতে ফুলেফেঁপে উঠছে তারা। ঢাকায় পুলিশ ও প্রশাসনের চোখের সামনে, প্রকাশ্যে নিয়োগ কর্মসূচি চালিয়েছে হিজবুত। ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ চরমপন্থা, তালিবানি শাসনের দিকে এগোচ্ছে'।
সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন লেখেন, '৭ মার্চ ঢাকায় ISIS, Hijbut Tahrir-এর মিছিল। ইসলামি জঙ্গিরা এখন দেশ ধ্বংস করতে পারে। ইউনূস ওদের সমর্থন করছেন এবং নিরাপত্তা দিচ্ছেন'।
এখনও পর্যন্ত যা খবর, সেই অনুযায়ী, মোট ১৯ জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সরাসরি তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হয় বলে জানিয়েছেন, মতিঝিলের সহকারী কমিশনার হুসেন মহম্মদ ফারাবী। ধৃতদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি। ধৃতদের মধ্য এক মানসিক রোগী এবং এক নাবালক রয়েছে বলে বাংলাদেশের bdnews24.com সূত্রে খবর।
বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে নিষিদ্ধ সংগঠনগুলির অনেকেই নতুন করে মাথা তুলছে। ধর্মীয় বিভাজন ঘটানোর পাশাপাশি, শান্তি ও সংহতি নষ্টই তাদের লক্ষ্য় বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।
এই হিজবুতও এখন প্রকাশ্যে কাজকর্ম চালাচ্ছে। কয়েক দিন আগে মিছিল নিয়ে ইতিউতি পোস্টারও চোখে পড়ে। পোস্টার চোখে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকাতেও। বিলি করা হয় পুস্তিকা। দফায় দফায় বৈঠকের পাশাপাশি, চট্টগ্রাম থেকেও তাদের নানা কাজকর্মের কথা সামনে এসেছে।
গত বছর অগাস্ট মাসে হাসিনা সরকারের পতনের পর হিজবুতের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ সেলিম আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারও দেয়। সে জানায়, যে সংরক্ষণবিরোধী আন্দোলন থেকে বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতন, তাতে তাদের কর্মীরাও অংশ নেয়। তবে কোনও ব্যানার হাতে ছিল না। তাই নতুন করে সংগঠনটি সক্রিয় হয়ে ওঠায় মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দিকেও আঙুল উঠছে।
২০০৯ সালে তদানীন্তন হাসিনা সরকার হিজবুতকে নিষিদ্ধ করে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সংগঠনটিকে ‘জন নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক’ বলে চিহ্নিত করা হয়। ভারত, চিন, পাকিস্তান, জার্মানি, ব্রিটেন, রাশিয়া, কাজাখস্তানেও সংগঠনটি নিষিদ্ধ। ইয়েমেন, লেবানন এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ছাড়া অন্য আরবদেশগুলিতেও নিষিদ্ধ হিজবুত।