কলকাতা: করোনা লকডাউনে মারাত্মক সংকটে পড়েছে বিউটি পার্লারগুলি। অন্য সময় পুজোর আগে কর্মীদের দম ফেলার সময় থাকে না। অথচ এবার পার্লার ফাঁকা। ভিড় নেই। অনেক পার্লার কর্মীদের মাইনেও দিতে পারছে না।


লোকাল ট্রেন চলছে না। ফলে আসতে পারছেন না দূরের খদ্দেররা। ডানকুনির টিউলিপ বিউটি পার্লারে বেগমপুর, বারুইপাড়া থেকেও খদ্দের আসতেন। এখন তাঁরা আর আসছেন না। ২৫ মার্চ লকডাউন ঘোষণার আগের দিন থেকে পার্লার বন্ধ করে দেওয়া হয়। সে মাসের টাকাটা কর্মীদের দেওয়া গিয়েছিল। তারপর থেকে কাজ বন্ধ, কর্মীদেরও বেতন দেওয়া যায়নি। জুনের মাঝ থেকে ফের পার্লার খুললেও কর্মীর অভাবে, লকডাউনে বন্ধ ছিল। ঠিকমত খোলে জুলাইয়ে, সে মাসের টাকা পেয়েছেন মেয়েরা। অন্যান্যবার পুজোয় যে টাকা বোনাস দেওয়া হত, এবার বিক্রি তেমন না হওয়ায় বোনাসও কিছুটা কমবে। খদ্দের অনেক কম কিন্তু স্যানিটাইজেশনের খরচ চাপায় কিছু কিছু পরিষেবার খরচ বেড়েছে। ব্যবহার করা হচ্ছে ডিসপোজেবল তোয়ালে, কাটিং শিট, বেড শিট ইত্যাদি। ফলে ফেসিয়াল ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ২০-৩০ টাকার মত খরচ বেড়ে গিয়েছে।



হাওড়ার গ্ল্যামার ফর ইউ লকডাউন শুরুর আগেই বন্ধ হয়ে যায়। খুলেছে ইদের পরে। পার্লার বন্ধ থাকলেও কর্মীরা প্রতি মাসে ঠিকমত টাকা পেয়েছেন, কাজও যায়নি কারওর। গত জানুয়ারিতে মাইনেও বেড়েছে, আগামী বছর কী হবে পরিষ্কার নয়। তবে কাস্টমার কমেছে অনেক। লকডাউনের পর প্রথম যখন পার্লার খোলা হয়, তখন মাছি তাড়ানোর অবস্থা হয়েছিল, সারাদিন ফাঁকা থাকত পার্লার। হয়তো গোটা দিনে একজন দুজন আসতেন। এখন তবু পুজোর মুখে খদ্দেরের দেখা মিলছে কিন্তু অন্যান্য বছর পুজোর আগে যা ভিড় হয় তার সঙ্গে তুলনাই হয় না।

আবার নাগেরবাজারের একটি পার্লারের কর্মীরা লকডাউনের টাকা পাওয়া তো দূরের কথা, মার্চ মাসের মাইনেটাও সেপ্টেম্বরে পেয়েছেন। অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে এ রাজ্যে যখন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লকডাউন চলছিল তখন তার ফাঁকে ফাঁকে মেয়েরা পার্লারের কাজ করেছেন। সেই টাকাটাও পাননি। খদ্দের প্রায় নেই, এক আধদিন বৌনিও হয় না। এখানকার হেয়ার স্ট্রেটনিংয়ের চাহিদা রয়েছে, অন্যান্য জায়গার থেকে খরচ কম, ফেসবুক লাইভ করে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়। তাই আগে দূর থেকে খদ্দের আসতেন, হাঁফ ফেলার সময় থাকত না। এমনকী মুর্শিদাবাদ থেকেও লোকে আসতেন, কাছাকাছি রাত কাটিয়ে সকালে হাজির হতেন পার্লারে। এবার ট্রেন বন্ধ, তাঁরাও আসছেন না। লকডাউনের পর পার্লারের খরচও বেড়েছে অনেক, সব পরিষেবারই দাম বেড়েছে। সে জন্যও খদ্দের কমেছে বলে কর্মীরা মনে করছেন। অন্যান্যবার পুজোয় ১ মাসের মাইনে বোনাস পান তাঁরা, এবার মালিকের উচ্চবাচ্য নেই।

তবে খদ্দের না থাকলেও সব পার্লারেই বেড়েছে স্যানিটাইজেশনের খরচ। কর্মীদের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে অনলাইনে, দেখানো হয়েছে, কীভাবে চিরুনি, কাঁচি ইত্যাদি স্যানিটাইজ করা যায়। কোথাও কর্মীরা কাজ করছেন মুখে মাস্ক পরে, আবার কোথাও পুরো ফেস শিল্ড,  হাঁটু অবধি ফুলহাতা পোশাক পরে। খদ্দেরদের অসুবিধে না হলে হাতে গ্লাভসও পরা হচ্ছে। কাস্টমারদের আনা হচ্ছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করিয়ে, পার্লারে ঢোকার আগে গায়ে স্প্রে করা হচ্ছে, হাতে দেওয়া হচ্ছে স্যানিটাইজার। কিছু ক্ষেত্রে চলছে থার্মাল স্ক্রিনিং। কর্মীরা নিজেদের থার্মাল স্ক্রিনিং করে কাস্টমারদের আগে দেখাচ্ছেন, তারপর কাজে হাত দিচ্ছেন।