সুমন দে, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, এবিপি আনন্দ :


সারা শরীরে বোমা বেঁধে হাসপাতালে ঢুকে পড়েছে এক দুষ্কৃতী। প্রতি মুহূর্তে হুমকি দিচ্ছে, রোগী-ডাক্তারবাবুদের সুদ্ধ গোটা হাসপাতালটাকে বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেবে। জেলার পুলিশ-প্রশাসন তটস্থ, কার্যত কম্পমান। এই রকম একটা টানটান স্নায়ু-যুদ্ধের আবহে আমাদের প্রথম আলাপ। সতেরো বছর আগের সেই দিন থেকে খুব কাছ থেকে দেখেছি এক অকুতোভয় সহযোদ্ধাকে। বীরভূমে এই ঘটনার পর, সোজা কলকাতায় ডেকে বলেছিলাম, ‘‘চলো গোপালদা, একসঙ্গে কাজ করি।’’ বলাটার মধ্যে একটু ব্যক্তিগত ঝুঁকি ছিল, কারণ তখন এবিপি আনন্দ আসার কোনও পরিকল্পনা দিগন্তেও ছিল না, আর আমার তৎকালীন প্রতিষ্ঠান সর্বভারতীয় স্টার নিউজের এই বঙ্গে জেলা-কভারেজের কোনও দায় ছিল না। কিন্তু, সাংবাদিকতার এমন সম্পদ আর তার সাহসের হাতে-গরম উদাহরণ হাতের সামনে পেয়ে, হেলায় হারায় কোন নির্বোধ?


যাই হোক, সেই শুরু, তারপর দেখতে দেখতে ঘটনাবহুল সতেরো বছর। রাজনীতিবিদদের হুমকি থেকে শুরু করে পুলিশ-প্রশাসনের চোখ রাঙানি, এমনকী বীরভূমের কুখ্যাত বেআইনি বালি-খাদান নিয়ে সিরিজ করার পর রাতভর বাড়িতে বোমাবাজি, কী ঘটেনি এই সতেরো বছরে? কিন্তু এক দিনের জন্য স্বধর্মে বিচ্যুত হতে দেখিনি বুকটান সহযোদ্ধাকে। 


তবে যুদ্ধে কবচকুণ্ডলের সৌভাগ্য ক’জনেরই বা হয়? শরীর সমস্যায় ফেলছিল বেশ কিছুদিন ধরে। কখনও চোখের অসুখ, কখনও আরও মারণ কিছু, কিন্তু কোনও কিছুই দমাতে পারেনি গোপালদাকে। মানবসম্পদের পরিভাষায় যাকে ‘প্রোডাক্টিভিটি’ বলে, তার নিরিখে সব সময়ে একেবারে শীর্ষে বাংলা টেলিভিশনের ওই চেনা লব্জ---‘‘গোপাল চট্টোপাধ্যায়, এবিপি আনন্দ, বীরভূম।’’


বাড়াবাড়ি অসুস্থতায় সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলার আগে শেষ হোয়াটসঅ্যাপে একেবারে সাংবাদিকসুলভভাবে অসুস্থতার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়ে লিখেছিলে---‘‘পাশে থাকবেন দাদা।’’ পাশেই তো ছিলাম গোপালদা, শঙ্খ ঘোষের ভাষায় ‘বেঁধে বেঁধে’-ই তো বাঁচছিলাম আমরা, হাতটা হঠাৎ ছাড়িয়ে নিলে কেন?


নাকি আসলে পাশেই আছ? 


গোপাল চট্টোপাধ্যায়রা আজীবন রয়ে যায় দর্শকদের মনে। 


এই তো জীবন, গোপালদা!