পার্থপ্রতিম ঘোষ, ওড়িশা: বড়রা ছডাচ্ছেন গুজব, আর ভূতের ভয়ে কাঁটা হয়ে যাচ্ছে পড়ুয়ারা। ভয় কাটাতে ভেঙে ফেলা শুরু হল বাহানাগা হাইস্কুলের প্রাথমিক বিভাগের বিল্ডিং। আপাতত স্কুলের নির্মীয়মাম বিল্ডিংয়ে নেওয়া হবে প্রাথমিকের ক্লাস। গুজবের জেরে স্কুল বিল্ডিং ভেঙে ফেলার প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তিবাদীরা।


এক অভিভাবক প্রসন্ন সাউ-এর কথায়, ওয়াচম্য়ান বলছে রাতে আওয়াজ আসছে। স্কুলঘরের এই মেঝেতেই শোওয়ানো ছিল শয়ে শয়ে মৃতদেহ! এখন না থাকলেও লেগে আছে রক্তের দাগ। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে, অভিভাবকদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া গুজব। রাতে না কি নিরাপত্তারক্ষীরা শুনতে পাচ্ছেন অদ্ভূত সব আওয়াজ। যার জেরে এই বিল্ডিং যেন হয়ে উঠেছে হানাবাড়ি!ভয়ে কাঁটা ছোট ছোট পড়ুয়ারা। 


২১ শতকেও বাহানাগাবাজার এলাকাকে গ্রাস করেছে অশরীরী আত্মার ভয়। অন্ধ বিশ্বাসের জেরে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে চাইছেন না অভিভাবকরা। তিনি আরও বলছেন, বাচ্চারা ভয় পাচ্ছে। ২০০-র উপর মৃতদেহ রাখা ছিল। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবো না।


করমণ্ডল আর যশোবন্তপুর এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়েছিল দ্রুত। উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দেহ রাখার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল বাহানাগা হাইস্কুলের প্রাথমিক বিল্ডিং। সব দেহ সরানোর পর অজানা শব্দ শোনার গুজব ছড়াচ্ছে আগুনের গতিতে। 


পরিচালন সমিতি সদস্য় বংশীধর উপাধ্য়ায়ের কথায়, ২০০র বেশি দেহ রাখা ছিল। অভিভাবকদের মধ্যে গুজব রয়েছে। কেউ বাচ্চাদের পাঠাতে চাইছেন না। যেহেতু দেহ এখানে ছিল। ভয় তো একটা লাগছেই।


পড়ুয়া ও অভিভাবকদের মন থেকে অন্ধ বিশ্বাসের ভয় দূর করতে যুক্তিবাদীদের সাহায্য না নিয়ে, প্রাথমিকের বিল্ডিং ভেঙে নতুন করে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে প্রশাসনকে। শুক্রবার শুরুও হয়ে গিয়েছে প্রাথমিক বিল্ডিং ভেঙে ফেলার কাজ।


বালেশ্বরের কালেক্টর ও জেলাশাসক দত্তাত্রেয় ভাসুসাহেব শিন্ডে বলছেন, বাচ্চাদের জিজ্ঞাসা করা হয় তাদের কী চাই। বাচ্চারা বলে যে ডাইনিং রুমে বৃষ্টি পড়লে অসুবিধা হয়। ওখানে রক্তের দাগ রয়েছে। ১৬ তারিখ সকুল খুললে আমাদের মনে হয় নতুন বিল্ডিং তৈরি হলে ভাল হবে। বাচ্চাদের কথাকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।


প্রশাসন শিশুদের কথাকে গুরুত্ব দেওয়ার সাফাই খাড়া করলেও যুক্তিবাদীদের দাবি, ভূত বলে কিছু নেই। সবই অন্ধ বিশ্বাস। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ মহাপাত্রের কথায়, ভূত বলে কিছু নেই। যুক্তি নেই কোনও। যুক্তিবাদী শিক্ষাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে এদিন সকালেই শুরু হয়ে যায় প্রাথমিক বিভাগে বিল্ডিংয়ের অ্যাসবেস্টস খোলার কাজ। যা ঘিরে হইচই পড়ে যায়। 


এরপরই হস্তক্ষেপ করে প্রশাসন। সিদ্ধান্ত হয় নতুন স্কুল বিল্ডিং তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। শুরু হয় প্রাথমিকের বিল্ডিং ভেঙে ফেলার কাজ।


শ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সহ-সম্পাদক সৌরভ চক্রবর্তী বলছেন দুরকমভাবে ভূতকে দেখা হয়। ভয় ও ভক্তি। যদি সেরকম কিছু করতে হয় একটা মেমোরিয়াল পার্ক করতে পারা যেত। যেখানে মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে পারবে। বাহানাগা স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আপাতত স্কুলেরই নির্মীয়মাণ একটি বিল্ডিংয়ে নেওয়া হবে প্রাথমিকের ক্লাস