বল্লভপুর: কী রাঁধছেন? প্রশ্ন উত্তরের অপেক্ষা না করেই বাড়িয়ে দিলেন হাত। অবিশ্বাসের চোখে প্রশ্নকর্তার দিকে তাকিয়ে বাড়ানো হাতের উত্তরে খুন্তি ধরাতে বাধ্য হলেন দোকানদার। খুন্তি হাতে আলু-বরবটির তরকারি রান্নায় হাত লাগালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

খুন্তি হাতে তরকারি আঁচে সেঁকতে সেঁকতেই মুখ্যমন্ত্রী দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলেন তিনি স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড করিয়েছেন কি না, এখনও তা বানানো হয়নি উত্তর শুনেই বললেন দ্রুত বানিয়ে নেবেন। খুন্তি হাতেই সঙ্গে থাকা জেলার শীর্ষ কর্তাদের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বলে রাখলেন ব্যবস্থাপনার দিকটা দেখে নিতে।

নবান্নের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেওয়ার আগে বুধবার দুপুরে হঠাৎই বীরভূমের বল্লভপুরের আদিবাসী গ্রামে পৌঁছে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে প্রথমে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তিনি কথা বলেন স্থানীয়দের সঙ্গে। জানতে চান তাদের অভাব-অভিযোগ।

রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে এভাবে হাতের নাগালে পেয়ে কিছুটা উদবেল হয়ে পড়েছিলেন গ্রামবাসীরা। কেউই আগে থেকে জানতেন মুখ্যমন্ত্রীর এই ঝটিকা সফর সম্পর্কে। তবে খবর পেয়েই হুড়োহুড়ি পড়ে যায় গ্রামবাসীদের মধ্যে।

তারা রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের কাছে তুলে ধরেন তাদের সমস্যা। কেউ শোনান পানীয় জলের সমস্যা, কেউ বলেন পুকুর না থাকার কথা। কেউ বা মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রামের ঘরের ঘরে বাথরুম না থাকার কথাও বলেন। সব মন দিয়ে শুনে জেলার আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে সেগুলো দ্রুত মিটিয়ে ফেলার নির্দেশও দেন তিনি। গ্রামে ঢোকার পথে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখে আশ্বাস দেন মাসিক হাজার টাকা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়ার বিষয়েও।

গ্রামের বাসিন্দাদের মনে করিয়ে দেন দ্রুত স্বাস্থ্যসাথী কার্ড বানানোর কথা, আদিবাসীদের জন্য রাজ্য সরকারের দেওয়া সমস্ত প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার কথা। গ্রাম থেকে বেরোনোর পথে দুটি দোকানে ঢোকেন মুখ্যমন্ত্রী। যেখানে খুন্তি হাতে তরকারি রান্নায় সাহায্য করার পাশাপাশি সেখানে চাও খান তিনি।

গতকালই বোলপুরে বিপুল জনজোয়ারে ভেসে পদযাত্রা ও জনসভা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করে ভোটের সুর বেঁধে দিয়েছেন তিনি। যেখানে কিছুদিন আগেই রোড শো করেছিলেন অমিত শাহ। তিনি বাসুদেব দাস বাউলের বাড়িতে সেরেছিলেন মধ্যাহ্নভোজ। যা নিয়েও জনসভা থেকে আক্রমণ শানিয়েছিলেন মমতা।

এমনিতেই বরাবরই পাশের বাড়ির দিদির ইমেজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইউএসপি। আদিবাসী গ্রামে গিয়ে সেই ইমেজেই তিনি ফের একবার শান দিলেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ, বীরভূমের ভোটের বড় নির্ধারক আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক। গত লোকসভা নির্বাচনে তা অনেকটাই ঝুঁকেছিল বিজেপি-র দিকে। সেটা নিজের দলের দিকে ফিরিয়ে আনাই লক্ষ্য তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমোর।

সেই লক্ষ্যে তিনি কতটা সফল হবেন, সেটা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আর কয়েক মাস।