কলকাতা : শনিবার গোটা দেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও শুরু হয়ে গেল করোনার বিরুদ্ধে টিকাকরণের অভিযান। প্রায় এক বছর উদ্বেগে কাটানোর পর, অনেকের মুখে হাসি ফুটলেও এড়ানো গেল না অঘটন।এদিন ভ্যাকসিন নেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন বি সি রায় হাসপাতালের একজন নার্স।


৩৬ বছরের ওই নার্সকে দ্রুত কলকাতা এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।সিসিইউ-তে তাঁর চিকিৎসা চলছে।

জানা গেছে, ৩ জনের মেডিক্যাল টিম তাঁকে দেখছেন, এখন ভাল আছেন বলে সূত্রের খবর। ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা মনে করছেন চিকিৎসকরা। তবে তাঁরা কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। ঠিক কী কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে, তা খতিয়ে দেখতে সবরকম পরীক্ষা করা হবে।

বীরভূমের রামপুরহাটে ভ্যাকসিন নেওয়ার পর একজন স্বাস্থ্যকর্মীর সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বলে স্বাস্থ্যদফতর সূত্রে খবর।

স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন,রামপুরহাটে একজন স্বাস্থ্যকর্মীর সাইড এফেক্ট দেখা দিয়েছে, তবে বিস্তারিত আসেনি, বিষয়টি দেখা হচ্ছে।

এখনও পর্যন্ত কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিনকে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের ছাড়পত্র দিয়েছে ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া বা ডিসিজিআই।

কিন্তু করোনার ভ্যাকসিন নেওয়া নিয়ে এখনও ধন্দে আছেন অনেক চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ। শনিবার রাজ্যে ২০ হাজার ৭০০ জনের ভ্যাকসিন নেওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু স্বাস্থ্যদফতর সূত্রে খবর, সন্ধে ৬টা পর্যন্ত ভ্যাকসিন নিয়েছেন ১৫ হাজার ৮৮৩ জন।কলকাতায় ১ হাজার ৯০০ জনের মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়েছেন ১ হাজার ৭৩৭ জন।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক তো, ভ্যাকসিন নেওয়ার তালিকা থেকে নিজের নামই কেটে দেন। তিনি জানিয়েন, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় তিনি টিকা নেবেন না।

তাহলে কি এখনও অনেকের মধ্যে করোনা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে?

স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেছেন, অনেকেই হয়ত ভয় পাচ্ছেন, কিন্তু ভয় পাওয়ার কারণ নেই। আশা করব সবাই নেবেন। কো উইন অ্যাপ কাজ করেনি।

ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে চিকিৎসকদের মধ্যেও।চিকিৎসক মানস গুমটার বক্তব্য, ভ্যাকসিন নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে, বিজ্ঞানীরা যে পর্যায়ে ট্রায়াল করছিলেন, সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হওয়ায় ধন্দ তৈরি হয়েছে। কো উইন অ্যাপ কাজ না করায় অনেকে রেজিস্ট্রেশন করতে পারেনি, আজ হঠাৎ বলছে চালু হয়েছে, কীভাবে বেশি লোক পাওয়া যাবে।

ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন না তুললেও, মেয়াদ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হু-এর প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন। তিনি বলেছেন, ভ্যাকসিন নিলেই যে আপনি চিরকালের জন্য করোনার কবল থেকে রেহাই পাবেন, তার নিশ্চয়তা কেউ দিচ্ছে না।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, ভ্যাকসিন নিতে অসুবিধা নেই বলে দাবি করছে চিকিৎসকদের একাংশ। চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার বলেছেন, ভ্যাকসিনের সাফল্যের হার নিয়ে সংশয়টা বিজ্ঞানীদেরই থাকুক। সাধারণ মানুষের না থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। কারণ সাইড এফেক্ট ছাড়া ভ্যাকসিন হয় না।ঠিক এই ভরসাতেই যাবতীয় সংশয়কে দূরে ঠেলে এদিন ভ্যাকসিন নিলেন অসংখ্য মানুষ।আগামী সপ্তাহেও চারদিন করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হবে রাজ্যে। কিন্তু সংশয় কাটবে কবে?