কলকাতা: দেশব্যাপী নোভেল করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক ভ্যাকসিনের টিকাকরণের সূচনার দিনই কেন্দ্রের ঘোষিত গাইডলাইন ভেঙে টিকা নেওয়ার অভিযোগ উঠল রাজ্যের দুই তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে। ভ্যাকসিন নিয়েছেন কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ও ভাতারের তৃণমূল বিধায়ক সুভাষ মণ্ডল। ভ্যাকসিন নেওয়ায় অভিযুক্ত ভাতারেরই শাসক দলের প্রাক্তন বিধায়ক বনমালী হাজরাও। সুভাষ মণ্ডল আজ সকালে ভাতার স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভ্য়াকসিন নেন।


এদিন কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে টিকা নেন চিকিত্সক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এরপর হাসপাতালে আসেন কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক তথা পুর প্রশাসক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনিও টিকা নেন।

ভারত সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়মাবলী অনুসারে প্রথম দফায় ভ্যাকসিন নেবেন কেবলমাত্র কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সামনের সারিতে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীরাই। শুধু তাই নয়, চলতি সপ্তাহের শুরুতে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় অনুরোধ করেছিলেন, জনপ্রতিনিধিরা যেন নিয়ম ভেঙে স্বাস্থ্যকর্মীদের আগে টিকা না নেন। কিন্তু তারপরও তৃণমূলের বিধায়করা ভ্যাকসিন নেওয়ায় কী করে এটা হল, সেই প্রশ্ন উঠছে। যদিও নিয়মভঙ্গের অভিযোগ উড়িয়ে কাটোয়ার বিধায়ক তথা পুরপ্রশাসক রবীন্দ্রনাথবাবুর দাবি, তালিকায় নাম থাকায় টিকা নিয়েছেন। আর পূর্ব বর্ধমান জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায়ও জানিয়েছেন, দুই বিধায়কই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য, তালিকায় নাম ছিল, সেই কারণেই টিকা নিয়েছেন।
ভ্যাকসিন নিয়ে চাপানউতোরের মধ্যে এ নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।

রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য সাফাইয়ের সুরে বলেছেন, আমাকে রাজ্য সরকার ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা বলে ঘোষণা করেছে। বিধায়ক নয়, পুর প্রশাসক হিসেবে নিয়েছি। সাধারণ মানুষ যাতে ভয় না পান, সেজন্য টিকা নিয়েছেন বলেও যুক্তি খাড়া করেন তিনি।

কিন্তু বিরোধী শিবিরের নেতারা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, কেন বিধায়করা পাবেন? সরকারকে এর জবাব দিতে হবে, এঁদের তো পাওয়া যাবে না। এটা অন্যায়, দুর্নীতির রাজ্যে আমরা বাস করছি, এটাই প্রমাণ করছে এ ঘটনা, বলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বিধায়করা টিকা নেওয়ায় তৃণমূলকে দুর্নীতির প্রশ্নে খোঁচা দিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, তৃণমূল বিধায়করা লাইন দিলে তো কম পরবেই। এমএলএদের পাওয়ার কথা নয়। আমফানের ত্রাণের টাকা এভাবে বণ্টন করা হয়েছে বলেও কটাক্ষ করেন তিনি।

দলীয় বিধায়করা টিকা নিয়ে যে ঠিক করেননি, তা বুঝিয়ে দিয়েছে তৃণমূল।
পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, নেওয়ার কথা নয়, নিয়ে থাকলে ভুল করেছেন। ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা পাবেন।

করোনার ধাক্কায় ইতিমধ্যে দেশে দেড় লক্ষ নাগরিক মারা গিয়েছেন। সংক্রমিতের সংখ্যা ১ কোটি ৫ লক্ষ ৪২ হাজার ৮৪১।

দেশের ৩ কোটি স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাকে প্রথম ধাপে ভ্যাকসিন দেওয়ার অভিযান শুরু হল শনিবার। ভারতীয় নিয়ন্ত্রণকারীরা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি কোভিশিল্ড ও ভারত বায়োটেক নির্মিত কোভ্যাক্সিনকে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগে ছাড়পত্র দিয়েছে।