সুদীপ চক্রবর্তী, রায়গঞ্জ: সমাজে নারীরা যে কোনও অংশেই পিছিয়ে নেই। পুরুষদের সঙ্গে সমান তালে সব কাজ করেন মহিলারা। ধর্মীয় ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। এখন তো পৌরহিত্যের কাজেও এগিয়ে আসছেন নারীরা। পূজা অর্চনার পাশাপাশি এবার হিন্দু রীতিমতে বিয়ের অনুষ্ঠানেও পারদর্শীতার সঙ্গে পৌরহিত্যের দায়িত্ব সামলালেন বালুরঘাটের এক বঙ্গ তনয়া। সোমবার রায়গঞ্জ শহরের মোহরকুঞ্জ নামের এক অনুষ্ঠান ভবনে বর ও কনের বিয়ে দিলেন মহিলা পুরোহিত সুলতা মন্ডল । উত্তর দিনাজপুরে সর্বপ্রথম মহিলা পুরোহিত দিয়ে কনের বিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা ছিল রায়গঞ্জ শহরের মোহরকুঞ্জ অনুষ্ঠান প্রাঙ্গনে।



বৈদিক গ্রন্থে কিছু নারী ঋষি বা মুনির কথা উল্লেখ আছে। একজন নারী ঋষি হওয়ার অর্থ তিনি বৈদিক মন্ত্র উচ্চারন করে সমস্ত দেবদেবী পূজা আর্চা ও যাগযজ্ঞ করতেন। কিন্তু মধ্যযুগীয় পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের সেই মান মর্যাদাকে দমিয়ে রেখে সমাজের বহু জায়গা থেকে তাদের পেছনে ফেলে রাখা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান আধুনিক সভ্যতার যুগে নারীরা শক্তিতে বলীয়ান হওয়ার পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরে পুরুষদের সঙ্গে সমান তালে তাল মিলিয়ে চলছে এযুগের নারীরা। এতদিন পুজো-পাঠ, যাগযজ্ঞ, বিয়ে, অন্নপ্রাশনের মতো সামাজিক মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতেন পুরোহিতেরা। যাঁরা হলেন পুরুষ। এখন থেকে সেই ধ্যান ধারনা পালটে দিয়ে সমাজের মহিলারাও এগিয়ে এসেছেন পুরোহিতের কাজে। পূজো পাঠ যাগযজ্ঞের পাশাপাশি এবার বিয়ের কাজও সম্পন্ন করছেন মহিলা পুরোহিতেরা। উত্তর দিনাজপুর জেলা সদর রায়গঞ্জ শহরের মোহরকুঞ্জ ভবনে এমনই এক বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি ধরা পড়ল। যেখানে সুলতা মন্ডল নামের ওই মহিলা পুরোহিত বিয়ের কাজ সম্পন্ন করলেন। রায়গঞ্জ বীরনগরের বাসিন্দা শিপ্রা রায়ের মেয়ে ঋতুপর্ণা রায়ের সাথে হেমতাবাদের বারইবাড়ির পাত্র ধীরেন্দ্র নাথ দে'র বিয়ের পুরোহিতের কাজ করলেন গঙ্গারামপুরের ঠ্যাঙাপাড়ার মহিলা পুরোহিত সুলতা মন্ডল। বিয়ের অধিবাস থেকে শুরু করে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারনের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করলেন মহিলা পুরোহিত সুলতা। মহিলা পুরোহিত সুলতা মন্ডল জানালেন সমাজে যে মহিলারা কোনও অংশেই কম নয়, তারাও যে পুরুষদের সঙ্গেই সমান তালে সব কাজ করতে পারেন, এই বার্তা দিতেই তিনি পুরোহিতের পেশাকে বেছে নিয়েছেন। মহিলা পুরোহিত দিয়ে নিজের বিয়ে হওয়া প্রসঙ্গে পাত্রী ঋতুপর্ণা বলেন, আমি নিজে একজন মেয়ে হয়ে পরিবার চালাতে অংশগ্রহন করছি। যিনি আমাকে জন্ম দিয়েছেন, বড় করে তুলেছেন তিনিওও একজন মহিলা।



একজন মহিলা পুরোহিত তাঁর বিবাহ কার্য সম্পন্ন করাতে তিনি যেমন খুশী তেমনই গর্বিত। ঋতুপর্ণার মতো খুশী তাঁর পরিবার ও আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবও। সুলতার কথায়, যদি পুরাণ দেখা হয় তবে সেখানে দেখা যাবে সেখানে মহিলারাই পূজো-আর্চা করতেন। পরে মধ্যযুগে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ গড়ে ওঠে। বিয়ের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত থেকে অতিথি অভ্যাগত এবং পরিবারের মহিলারা গর্বিত একজন মহিলার এই পুরোহিত পেশায় যুক্ত হওয়ায়। সমাজের কোনও কাজেই যে মহিলারা আজ আর পিছিয়ে নেই এটা অনুভব করতে পেরেই গর্বিত তাঁরা।