ঋত্বিক মণ্ডল, কলকাতা : করোনা সঙ্কটের মধ্যে বেড়েই চলেছে পেট্রোপণ্যের দাম। জ্বালানি তেল থেকে রান্নার গ্যাস সবই অগ্নিমূল্য। ডিজেল সেঞ্চুরি করে ফেলার পর ব্যবসা কীভাবে চলবে, তা নিয়ে আতান্তরে পড়েছেন বহু পরিবহণ ব্যবসায়ী। কেউ কেউ ব্যবসা গোটানোর কথা ভাবছেন। মধ্যবিত্তদের মধ্যে অনেকে আবার ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন।


কথায় বলে ডিজেল বাড়লে সব বাড়ে। রাজ্যের একাধিক জেলায় সেই ডিজেলের দামই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তার ভাঁজ আরও গভীর হয়েছে পরিবহণ ব্যবসায়ীদের কপালে। 


ডানলপের পরিবহণ ব্যবসায়ী অসিত পাল। ২১৪ এ রুটে তাঁর দুটি বাস চলত। একটি বাস আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন দ্বিতীয় বাসটি চালাতে গিয়েও নাভিশ্বাস উঠছে! অসিতবাবু বলেন, ডিজেল যেখানে যাচ্ছে ! অনেক দিন ধরেই ব্যবসা ধুঁকছে। একটা বাসে ৮ জনের সংসার আর চলছে না। কিন্তু বাসও কেউ কিনতে চাইছে না।


ব্যারাকপুর-ধর্মতলা রুটে তিনটি বাস চলত ব্যারাকপুরের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা গুপ্তের। দুটো বাস বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন একটা বাসের ওপর নির্ভরশীল গোটা পরিবার। প্রিয়ঙ্কা বলেন, একটা বাসে এখন প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা লাভ। কীভাবে মেনটেন্যান্স করব। ডিজেল যা হয়েছে আর বাস চালানো যাবে না।


বাসমালিক হোন বা ট্যাক্সি, ডিজেলের দামের জ্বালায় জ্বলছেন প্রত্যেকেই! বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের 
সহ সম্পাদক সঞ্জীব রায় বলেন, এরা ডিজেলের দাম বাড়াচ্ছে। লাস্ট যখন ভাড়া বেড়েছিল, তখন ডিজেলের দাম ছিল ৬৫ টাকা। আমাদের পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না।


এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ট্রাকমালিকদের সংগঠন। ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সজল ঘোষ বলেন, আমরা জাতীয় স্তরে আন্দোলন করার কথা ভাবছি।


বাস-ট্রামের মতো গণপরিবহণের ওপর যারা নির্ভরশীল নন, যাঁরা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন, পেট্রোল-ডিজেলের দামের ছ্যাঁকা লেগেছে তাঁদেরও। সঙ্গীতশিল্পী মণিদীপা চক্রবর্তী বলেন,  গাড়ি আছে। আগে প্রোগ্রামে যেতাম। এখন ওলা উবর ব্যবহার করছি। প্রোগ্রাম করতে গেলে বলে দিচ্ছি, যন্ত্রের ব্যবস্থা আপনাদের করতে হবে। আমি ওলা উবরে চলে যাব। মাঝে ভেবেছিলাম গাড়ি বদলে সিএনজি নেব। কিন্তু শহরে পর্যাপ্ত পাম্প নেই।


সব মিলিয়ে জ্বালানির জ্বালায় জেরবার সাধারণ মানুষ। সুরাহার কোনও লক্ষ্মণ নেই।