কলকাতা: গতকাল ডায়মন্ড হারবারে বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের। তিনি বলেছেন-‘ আমি সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছি।মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীরও সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা আছে।ওঁকে সংবিধান মেনে চলতেই হবে'।
রাজ্যপাল বলেছেন, ‘ আমি সতর্ক করা সত্ত্বেও রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। মানবাধিকার দিবসেই কী হল রাজ্যে!যা ঘটল তা গণতন্ত্রের পক্ষে লজ্জার’।
গতকালের ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল। তিনি বলেছেন,‘একজন দায়িত্বশীল মুখ্যমন্ত্রী কী করে এমন ভাষা প্রয়োগ করেন।উনি ক্ষমা চাইলে, ওঁরই সম্মান বাড়বে।’


রাজ্যপাল বলেছেন,‘ ডায়মন্ডহারবারের সাংসদের আচরণ সংবিধানের পক্ষে অবমাননাকর। ডায়মন্ডহারবারের মতো ঘটনা যেন আর না ঘটে। আমার সাংবিধানিক দায়িত্বকে আমি লঘু করতে পারব না।আমি মুখ্যমন্ত্রীকে সতর্ক করছি।’
রাজ্যপাল বলেছেন, ‘ভারতীয়দেরই বহিরাগত বলছেন!দয়া করে আগুন নিয়ে খেলবেন না।‘ ভারত এক দেশ, সব নাগরিক সমান। আপনি সংবিধান থেকে সরলে আমার দায়িত্ব শুরু হবে।’
ধনকড় বলেছেন,‘ মুখ্যসচিব-ডিজিপিকে যোগাযোগ করে বলেছি এমন ঘটনা ঠিক নয়।
গতকাল সকাল ৯.০৫-এ মুখ্যসচিব-ডিজিপিকে সাবধান করেছিলাম।রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের কথায় সতর্ক হলে এমন ঘটে না।’
রাজ্যপাল বলেছেন, ‘ রাজ্যের চারদিকে দুর্নীতি, বিরোধীরা প্রতিবাদের জায়গাই পাচ্ছেন না।বিরোধীদের সমস্ত কার্যকলাপ নৃশংসভাবে দমন করা হচ্ছে।’

রাজ্যপাল বলেছেন, ‘ গতকালের ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে রিপোর্ট পাঠিয়েছি।এমন ঘটনা আর বরদাস্ত করা হবে না। কয়েকজন আমলা সরকারি চাকুরে না হয়ে, রাজনৈতিক কর্মী হচ্ছেন।২১ জন এমন আমলার নাম তালিকাভুক্ত করেছি। এই গোপন তথ্য মুখ্যমন্ত্রীকে দেব।’
রাজ্যপালের প্রশ্ন,‘ রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টার কাজটা কি? অবসরের পর কেন তাঁকে সুবিধা দেওয়া? এডিজি আইনশৃঙ্খলা থাকার সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত।’

রাজ্যপালের দাবি, ‘ একাধিকবার চিঠি দিলেও, গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সাড়া দেন না মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে দুর্নীতি-পক্ষপাতমূলক আচরণকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়। বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন আছে।রাজ্য বিনিয়োগ প্রস্তাব বলে যা দেখিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কোথায় বিনিয়োগ প্রস্তাব, কতজনের চাকরি? প্রশ্নের জবাব নেই।অথচ ১০ বছরের রিপোর্ট কার্ডে সাফল্যের কথা লেখা হয়।’
তিনি বলেছেন, ‘ করোনা মোকাবিলায় ২০০ কোটির সরঞ্জাম কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ। কোথায় গেল তদন্ত রিপোর্ট? রাজ্যপালের প্রশ্নের জবাব না দিতে নতুন নতুন ফন্দি আঁটা হয়।’

রাজ্যপাল বলেছেন, ‘ কত মিথ্যা বলবেন? প্রশাসনকে আর কত নামাবেন? রাজ্যপালকে উত্তর না দিয়ে, সোশাল মিডিয়ায় বলা হচ্ছে। এমন আচরণ করা হচ্ছে, যেন রাজ্যপাল অপরাধী! রাজ্যপালের প্রশ্নেও কেন নিরুত্তর? কোথায় গেল স্বচ্ছতা?  রাজ্যের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির উল্লেখ করেছি রিপোর্টে।’

তিনি বলেছেন,  রাজ্যপাল কোনও রবার স্ট্যাম্প নন। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অপশব্দ প্রয়োগ করা হচ্ছে।তবু শান্তিপূর্ণ ভোটের লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারি।