নয়াদিল্লি: নেতা হিসেবে কার্যত ধর্তব্য়ের মধ্য়েই আনছিলেন না কেউ। রাজনীতিতে তাঁর অস্তিত্বই খারিজ করে দেওয়া হচ্ছিল। সেই আবহেই কার্যত রূপকথার পাখির মতো, আগুনের মধ্যে থেকে পুনরাবির্ভাব ঘটেছিল তাঁর। কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত, 'ভারত জোড়ো যাত্রা' বার করে শুধু নিজের ভাবমূর্তিই পুনরুদ্ধার করেননি, দলকেও খাদের কিনারা থেকে তুলে এনেছিলেন। দক্ষিণ থেকে উত্তর ভারতে পদযাত্রার পর এ বার পূর্ব থেকে পশ্চিমে, ভারতকে একসূত্রে বাঁধতে উদ্যোগী হলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ জানিয়েছেন, আগামী দিনে অরুণাচলের পাসিঘাট থেকে গুজরাতের পোরবন্দর পর্যন্ত যাত্রার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।


ছত্তীসগঢ়ের রাইপুরে কংগ্রেসের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন চলছে। রবিবার তাতে অংশ নেন রাহুল খোদ। আর সেখান থেকেই 'ভারত জোড়ো যাত্রা'র দ্বিতীয় পর্বের সূচনার কথা জানা গেল। কংগ্রেসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে আসছে। কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত রাহুল যে পদযাত্রা করেছেন, তার রেশ এখনও অনুভূত হচ্ছে। তাই সেই রেশ থাকতে থাকতেই আরও একদফা পদযাত্রার চিবন্তাভাবনা চলছে। এ বার ভারতকে একসূত্রে বাঁধতে দেশের পূর্ব থেকে পশ্চিমের রাজ্যগুলিতে যাবেন রাহুল।


একের পর এক রাজ্য যখন হাতছাড়া হচ্ছে, নেতৃত্ব সঙ্কটে ভুগছে দল, অভ্য়ন্তরীণ কলহও লেগে রয়েছে, সেই আবহে 'ভারত জোড়ো যাত্রা'য় অভাবনীয় সাফল্য পান রাহুল। দলের কর্মী-সমর্থক তো বটেই, সাধারণ মানুষও রাহুলের এই পদযাত্রায় যোগ দেন দলে দলে। কংগ্রেস সূত্রে খবর, পূর্ব থেকে পশ্চিমে 'ভারত জোড়ো যাত্রা'র পরিকল্পনা আগেই সেরে রাখা হয়েছিল। খাতায় কলমে এখনও কিছু ঠিক হয়নি যদিও, তবে তিনি যে আগামী দিনেও পদযাত্রা বের করবেন, ঢের আগেই তার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন রাহুল।


রবিবার রাইপুরে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে ভাষণ দেন রাহুল। সেখানে জানান, কংগ্রেস দলটি আত্মত্যাগের জন্যই পরিচিত। তাই ঘাম, রক্ত ঝরিয়ে কাজ করতে হবে দলের সকলকে। তাতেই গোটা দেশ ফের একবার কংগ্রেসের প্রতি টান অনুভব করবে। রাহুল বলেন, "চার মাস 'ভারত জোড়ো যাত্রা' করেছি আমরা। প্রতিকূল আবহাওয়াতেও তাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন। অনেক কিছু শিখেছি এই যাত্রা থেকে।" এই দীর্ঘ যাত্রাপথে নিজের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে আরও সচেতন হয়েছেন বলেও জানান রাহুল। 


'ভারত জোড়ো যাত্রা' নিয়ে রাহুলের বক্তব্য, "যে দিন রাস্তায় নামলাম, সেই দিনই সবকিছু পাল্টে গেল। রাজনীতি নিয়ে কথাই বলিনি আমরা। মানুষের সঙ্গে সমীকরণেই বদল আসে। ভারত মাতা আমাকে বার্তা দিলেন যে, সব অহং ঝেড়ে ফেলতে হবে। যত মানুষের সঙ্গে আলাপ হতে লাগল, ততই অহং এবং বাকি সবকিছু ধুয়ে মুছে গেল। কাশ্মীর পৌঁছতে পৌঁছতে নিজেই কেমন যেন নিশ্চুপ হয়ে গেলাম। আমার কোনও বাড়ি নেই। ধনী, দরিদ্র, প্রবীণ-নবীন, যে কোনও ধর্মের মানুষই হোন না কেন, বুঝবেন, আমি তাঁদের বাড়িতে এসেছি।"


২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে সমমনস্ক রাজনৈতিক দলগুলিকে একছাতার নিচে এনে, একজোট হয়ে বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা একাধিক বার বলেছে কংগ্রেস। বিজেপি বিরোধী শিবিরকে নেতৃত্বদানে আগ্রহী তারা। এ দিন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরাও সেই বার্তাই দেন। বলেন, "বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সব রাজনৈতিক দলকে একজোট হতে দেখতে চাই আমরা। একসঙ্গে কাজ করতে চাই।" তবে কংগ্রেস এবং কিছু হাতেগোনা দল বিরোধী জোটের পক্ষে সওয়াল করলেও, এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে তৃণমূল বা আম আদমি পার্টির মতো দলের কাছ থেকে ইতিবাচক বার্তা আসেনি। বরং কংগ্রেসের নেতৃত্বদানের ক্ষমতা নিয়েই বারং বার প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে তারা।