নয়াদিল্লি: সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনী বন্ডকে ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করেছে। তার পরও সবচেয়ে বেশি টাকা অনুদান পেয়েছে বিজেপি। বরং আগের তুলনায় ৮৭ শতাংশ বেশি টাকা অনুদান পেয়েছে তারা। বার্ষিক রিপোর্টে এমনই এমনই তথ্য সামনে আনল নির্বাচন কমিশন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তারা ৩ হাজার ৯৬৭ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা অনুদান পেয়েছে বলে জানা গেল। (Political Parties Donations)


সোমবার বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন, তাতে রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। দেখা গিয়েছে, ২০২২-’২৩ সালে বিজেপি ২,১২০.০৬ কোটি টাকা অনুদান পেয়েছিল। ২০২৩-’২৪ সালে তা বেড়ে হয় ৩৯৬৭.১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে ১,৬৮৫.৬২ কোটি টাকা অনুদান পেয়েছে তারা, যা মোট অনুদানের ৪৩ শতাংশ। ২০২২-’২৩ সালে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে তারা ১,২৯৪.১৪ কোটি টাকা পেয়েছিল, যা ছিল মোট অনুদানের ৬১ শতাংশ। অর্থাৎ আগের তুলনায় নির্বাচনী বন্ড মারফত কম টাকা ঢুকেছে বিজেপি-র অ্যাকাউন্টে। (BJP Donations)


গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে শীর্ষ আদালত নির্বাচনী বন্ডকে ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করে। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলির চাঁদাপ্রাপ্তি বাতিল করা হয়। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে ওই রায় দেয় আদালত। তাই ২০২৩-’২৪ সালেই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে শেষবার চাঁদা সংগ্রহ করেছে রাজনৈতিক দলগুলি। তাতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে বিজেপি-ই। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে মোট যত চাঁদা গিয়েছে, তার অর্ধেকই প্রায় বিজেপি-র অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে বিজেপি ৬,০৬০ কোটি টাকা চাঁদা পেয়েছে, তৃণমূল ১,৬০৯.৫৩ কোটি এবং কংগ্রেস ১,৪২১.৮৭ কোটি টাকা।


রাজনৈতিক দলগুলির আয়-ব্যয়ের হিসেব জানতে ক্লিক করুন- https://www.eci.gov.in/contribution-reports-এ।


তাই প্রচারের জন্য খরচ করতে কোনও অসুবিধেই হয়নি বিজেপি-র। কারণ নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান বলছে, আগের তুলনায় ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বেশি খরচ করেছে বিজেপি। আগের লোকসভা নির্বাচনের জন্য যেখানে ১,০৯২.১৫ কোটি টাকা খরচ করেছিল গেরুয়া শিবির, ২০২৪ সালে তা বেড়ে হয় ১,৭৫৪.০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫৯১.৩৯ কোটি টাকা খরচ করা হয় বিজ্ঞাপন এবং প্রচার খাতেই। 


তালিকায় এর পরই রয়েছে কংগ্রেস। তবে বিজেপি-র সঙ্গে তাদের প্রাপ্ত চাঁদা এবং খরচের ব্যবধান অনেকটাই। দলের হিসেব বলছে, ২০২২-’২৩ সালে ২৬৮.৬৮ কোটি টাকা অনুদান পেয়েছিল তারা। ২০২৩-’২৪ সালে তা বেড়ে হয় ১,১২৯.৬৬ কোটি টাকা। মোট অনুদানের ৭৩ শতাংশই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে পেয়েছে কংগ্রেস, ৮২৮.৩৬ কোটি টাকা, যা ২০২২-’২৩ সালের তুলনায় ১৭১.০২ কোটি টাকা। আগের নির্বাচনে যেখানে ১৯২.৫৫ কোটি টাকা খরচ করেছিল কংগ্রেস, ২০২৩-’২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তারা ৬১৯.৬৭ কোটি টাকা খরচ করে। 


তৃণমূলের অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩-’২৪ সালে তাদের আয় বেড়েছে ৬৪৬.৩৯ কোটি টাকা। তার আগের বছর ৩৩৩.৪৬ কোটি টাকা আয় হয়েছিল। মোট অনুদানের ৯৫ শতাংশই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে পেয়েছে জোড়াফুল শিবির। গত সপ্তাহে তৃণমূলের আয়-ব্যয়ের হিসেব রিপোর্ট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।


এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে ধনী রাজনৈতিক দল বিজেপি। ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রাপ্ত হিসেব অনুযায়ী, তাদের হাতে নগদ রয়েছে ১০৯.২ কোটি টাকা। ব্যাঙ্কে রয়েছে ১,৬২৭.২ কোটি টাকা, ফিক্সড ডিপোজিট করা রয়েছে ৫,৩৭৭.৩ কোটি টাকা। 'এক দেশ এক নির্বাচন' আইন চালুর বিরোধিতায় তাদের এই ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সকেও হাতিয়ার করছে বিরোধীরা। 'এক দেশ এক নির্বাচন' আইন চালু হলে, যে দলের আর্থিক ক্ষমতা বেশি, তারা প্রচারে একচেটিয়া আধিপত্য কায়েম করবে এবং বিরোধীরা তাদের সামনে টিকতে পারবে না বলে মত অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদেরও।