নয়াদিল্লি: চিনা সেনার হামলায় পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সোমবার রাতে এক কর্নেল পদমর্যাদার অফিসার সহ ২০ জন ভারতীয় সেনাকর্মী নিহত হন। ভারতের প্রত্যাঘাতে হতাহত হয় এক চিনা কমান্ডিং অফিসার সহ ৪৩ জন সামরিক কর্মীও। গত পাঁচ দশকে এধরনের ভয়ঙ্কর সংঘর্ষ ভারত ও চিনের মধ্যে হয়নি। কোনও গোলাগুলি না চলেনি। হাতাহাতি, পাথর ছোঁড়াছুঁড়ি  থেকে শুরু করে সূত্রের খবর, রড, লাঠি, ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।


এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক গালওয়ান সংঘর্ষের টাইমলাইন---

১. পূর্ব লাদাখে একমাস ধরে চলা সংঘাতে ইতি টানতে গত ৬ জুন ভারত ও চিনা সেনার মধ্যে লেফটেন্যান্ট জেনারেল লেভেলে আলোচনা শুরু হয়। সেই আলোচনার পর ছোট সংঘর্ষ বাঁধে।

২. সেই সপ্তাহের মাঝামাঝি, চিনারা ফিরে এসে ভারতীয় ভূখণ্ড তাঁবু গেড়ে বসে। ভারত তা খুলে দেয়। এরপরই, সেখানেও একটা ছোট সংঘর্ষ বাঁধে। তাতে দুপক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন।

৩.  চিনারা ফিরে যায়। কিন্তু, সপ্তাহান্তে ফের বিপুল সংখ্যায় ফিরে আসে। গত ১৪ তারিখ দুপক্ষের মধ্যে পাথর ছোঁড়াছুঁড়ি হয়।

৪. সোমবার রাতে গালওয়ান নদীর কাছে খাদের ধারে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। দ্রুত তা বড় আকার নেয়। অনেক ভারতীয় সেনা নদীতে পড়ে যান।

চিনা সেনার তরফে জানানো হয়েছিল, তারা গালওয়ান উপত্যকায় নিজভূমিতে ফেরত যাবেন। পরেরদিনই দুপক্ষের মেজর জেনারেল পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।

৫. চিনা সেনা পিছু না হঠায় কর্নেল সন্তোষবাবুর নেতৃত্বে ভারতীয় সেনার একটি দল চিনাদের সঙ্গে কথা বলতে যায়। কিন্তু, চিনারা পিছু না গিয়ে উল্টে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে। বোল্ডার, তার ও পেরেক লাগানো কাঠের তক্তা দিয়ে ভারতীয় ফৌজের ওপর হামলা শুরু করে। ভারতও জবাব দেয়। সংঘর্ষে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। পাথর ও রডের ঘায়ে আহত হন ভারতীয় জওয়ানরা।

৬. চিনা হামলায় সিও কর্নেল গুরুতর জখম হন। এক আহত জওয়ান ও কর্নলকে নিয়ে ফিরে আসে ভারতীয় সেনা। সেখানে তখন আরও কয়েকজন ভারতীয় জওয়ান ছিল। তাঁরাও আহত অবস্থায় পড়ে ছিলেন। চিন তাঁদের আটক করে।

৭. প্রায় ৪০ মিনিট পর, মেজরের নেতৃত্বে ভারতীয় সেনারা বড় সংখ্যায় সেখানে যান। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়।

৮. এবার ভারতীয় ফৌজ প্রত্য়াঘাত করে। তাতে ৫৫-৬০ জন চিনা সেনা জওয়ান গুরুতর আহত হয়। অনেকেই সেখানে মারা যায়। সূত্রের খবর, বহু চিনা সেনা মারা গিয়েছে। যদিও, সেই সংখ্যা প্রকাশ করেনি পিএলএ।

গোটা সংঘর্ষ পর্বটি ঘটে একটি খাদের কিনারায়। দুপক্ষের অনেক জওয়ান খরস্রোতা নদীতে পড়ে যান। চিনাদের সংখ্যা ভারতীয়দের থেকে অনেক বেশি ছিল।

এই সময় দুপক্ষের অনেকে হতাহত হন। চিনা সেনার এক ব্রিগেডিয়ার সাদা পতাকা দেখিয়ে উত্তেজনা প্রশমন করার চেষ্টা করেন। দুপক্ষকে শান্ত হতে বলেন।

৯. হাতাহাতি রাত পর্যন্ত গড়ায়। পাথর, ধাতব বস্তু, কাঁটাতার, রড ও পেরেক লাগানো কাঠের তক্তা বিপুল হারে ব্যবহার করা হয়। এতে অনেকে মাথায় গুরুতর চোট পান।

১০. প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলে। মধ্যরাতের পর তা থামে। অনেক দেহ নদী থেকে টেনে তোলা হয়। অনেকে এতটাই আহত ছিলেন যে, সকালে মারা যান।

সূত্রের খবর, এখন আইটিবিপি-র থেকে ওই পোস্টের দায়িত্ব তুলে নিয়েছে ভারতীয় সেনা।