ভাটপাড়ার ছেলে সংগ্রামের বিয়ে হয়েছিল ২ বছর, বাড়িতে আছেন বাবা, মা, দাদা ও স্ত্রী। ১৪ তারিখ কল্যাণী থেকে ফেরার সময় অসাবধানতা বশত তিনি বাইকের স্ট্যান্ড তুলতে ভুলে যান বলে খবর। স্ট্যান্ড স্পিড ব্রেকারে লাগে, সংগ্রাম ছিটকে পড়েন রাস্তায়। তাঁর মাথায় হেলমেট ছিল ঠিকই কিন্তু ফিতে লাগানো ছিল না। সংগ্রাম মাথায় আঘাত পান, কান দিয়ে রক্ত বার হতে থাকে। তাঁকে কল্যাণী মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখান থেকে ১৫ তারিখ ভোরে নিয়ে আসা হয় কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে। গতকাল চিকিৎসকরা তাঁকে ব্রেন ডেড ঘোষণা করেন।
সংগ্রামের পরিবার সিদ্ধান্ত নেয়, তাঁর অঙ্গদান করা হবে। সেই মত গতকাল রাতে স্বাস্থ্য দফতরের ব্রেন ডেথ অডিট কমিটি অ্যাপোলো হাসপাতালে আসে। আসেন রিজিওনাল অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট অর্গানাইজেশনের সদস্যরা। সংগ্রামকে পরীক্ষা করে তাঁরাও তাঁকে ব্রেন ডেড ঘোষণা করেন। শুরু হয় গ্রহীতা সন্ধান। সংগ্রামের সম্পর্কিত বোন মৌমিতা সাহা ও রিয়া দাস সরকার বলেছেন, এত অল্প বয়সে ভাইয়ের চলে যাওয়া তাঁরা মানতে পারছেন না। তবু কয়েকজন মানুষ তাঁর অঙ্গ নিয়ে বেঁচে থাকুন।
জানা গিয়েছে, সংগ্রামের লিভার পাচ্ছেন আগরতলার বাসিন্দা ৫৯ বছরের এক ব্যক্তি। কাল তাঁকে ত্রিপুরা থেকে অ্যাপোলো হাসপাতালে আনা হয়েছে। এখানেই অঙ্গ প্রতিস্থাপন হবে। একটি কিডনি পাচ্ছেন লিলুয়ার বাসিন্দা ২৯ বছরের এক যুবক। এটিও প্রতিস্থাপন হবে অ্যাপোলোয়। হৃদযন্ত্র পাবে হাওড়ার নারায়ণা মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের ১৭ বছরের কিশোরী। দুটি কর্নিয়া দান করা হয়েছে দিশা আই হাসপাতালে। অন্য কিডনি ও ত্বক এসএসকেএমে দান করা হয়েছে।
অঙ্গ নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে তৈরি হবে দুটি পৃথক গ্রিন করিডোর। একটি যাবে নারায়ণা হাসপাতালে, হৃদযন্ত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য, অন্যটি যাবে এসএসকেএমে। অস্ত্রোপচার করে অঙ্গ বার করা ও ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য অ্যাপোলো হাসপাতাল তৈরি করেছে ৫৬ জনের দল। তাঁদের প্রত্যেকের কাল রাতে করোনা পরীক্ষা হয়েছে। পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসার পর আজ তাঁরা প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু করেছেন। অন্য হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকের দল এসেছে, যে চিকিৎসকরা ওটিতে থাকবেন তাঁদের করোনা পরীক্ষা হয়েছে।
আজই ময়নাতদন্তের পর সংগ্রামের দেহ তুলে দেওয়া হবে তাঁর পরিবারের হাতে।