কোচি: শিশুকে স্তন্যদান করানো জীবনের অধিকারের মধ্য পড়ে। শিশুকে স্তন্যদান করানোর অধিকার থেকে মাকে বঞ্চিত করা যায় না। আবার মাতৃদুগ্ধপানের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না শিশুকেও। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১-এর উল্লেখ করে এমনি নির্দেশ দিল কেরল হাইকোর্ট। মাতৃদুগ্ধের উপর নির্ভরশীল এক শিশুকে বাবার হাতে তুলে দিয়েছিল শিশু কল্যাণ কমিটি। তাদের সেই সিদ্ধান্ত খারিজ করল আদালত। (Right to Life)


কোলের সন্তানকে নিয়ে স্বামী-সংসার ছাড়েন এক মহিলা। শ্বশুর মশায়ের সঙ্গে পালিয়ে যান তিনি। সেই নিয়ে বিস্তর শোরগোল হলে হস্তক্ষেপ করে শিশু কল্যাণ কমিটি। শ্বশুরের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়া ওই মহিলার কাছে শিশুটি সুরক্ষিত নয় বলে সিদ্ধান্তে উপনীত হয় তারা। সেই মতো বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয় শিশুটিকে। কিন্তু শিশু কল্যাণ সমিতির সেই সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিল আদালত। (Kerala High Court)


শুক্রবার শুনানি চলাকালীন, মায়ের হাতে শিশুটিকে তুলে দিতে নির্দেশ দেয় আদালত। বিচারপতি ভিজি অরুণ জানান, শিশু কল্যাণ কমিটির নির্দেশটি নৈতিক ভাবে পক্ষপাতদুষ্ট। শিশু কল্যাণ সমিতির সদস্যরা নিজেদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের নিরিখে ওই সিদ্ধান্তে উপনীত হন বলেও মন্তব্য করে আদালত। 


নির্দেশ দিতে গিয়ে বিচারপতি বলেন, "বাচ্চাটির ভাল-মন্দ দেখাই শিশু কল্যাণ কমিটির লক্ষ্য  হওয়া উচিত। বাচ্চাটির মা স্বামীর সঙ্গে থাকবেন, না অন্য কারও সঙ্গে, তা নিয়ে কমিটির মাথাব্যথার কোনও কারণ নেই। কমিটির সদস্যরা ব্যক্তিগত ভাবে ওই মহিলাকে ভাল-মন্দ যা ইচ্ছে ভাবতে পারেন। তাই বলে তাঁকে খারাপ মা ভাবার কোনও কারণ নেই। ব্যক্তিগত নীতির ভিত্তিতে নেওয়া সিদ্ধান্ত পক্ষপাতদুষ্টই হয়। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা যে, এই সিদ্ধান্তে সেই পক্ষপাতদুষ্ট আচরণই প্রতিফলিত হচ্ছে।"


শিশুটি যে মাতৃদুগ্ধ নির্ভর, সেই বিষয়টি কেন গুরুত্ব পেল না কমিটির কাছে, প্রশ্ন তোলে আদালত। বিচারপতি বলেন, "১৪ মাসের শিশুকে  মায়ের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার অর্থ মায়ের স্তন্যদান এবং শিশুটির মাতৃদুগ্ধপানের অধিকার খর্ব করা। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১-এ যে জীবনের অধিকারের কথা বলা রয়েছে, বিষয়টি তার অন্তর্ভুক্ত।"


প্রায় একমাস ধরে মায়ের থেকে আলাদা রাখা হয়েছিল শিশুটিকে। সেই নিয়েও শিশু কল্যাণ কমিটিকে ভর্ৎসনা করে আদালত। কমিটির সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বেদনাদায়ক বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি। এই বয়সে মায়ের যত্ন, ভালবাসা থেকে শিশুটিকে বঞ্চিত করা মনে নেওয়া যায় না বলে জানান। শিশুটির মা কমিটির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাতেই অবিলম্বে শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিল আদালত।