নয়াদিল্লি: আসন্ন কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে শিল্পমহল থেকে নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে। একইভাবে ভারতীয় গাড়ি শিল্পেরও এবারের বাজেট নিয়ে অনেক প্রত্যাশা। দীর্ঘদিন ধরে বাজারের মন্দা ও লাল ফিতের ফাঁস সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত গাড়ি বাজার। তাই বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই শিল্পের ওপর ১০ শতাংশ জিএসটি কমানো হোক।

সমীক্ষা বলছে, ভারতে প্রতি ১,০০০ জনে গাড়ির সংখ্যা মাত্র ২২। চিনকে ছুঁতে গেলে আগামী ১০-১৫ বছরে অন্তত ২৫০০০ থেকে ৫০,০০০ অটো ডিলার আউটলেট এ দেশে খুলতে হবে। কিন্তু গাড়ি শিল্প বর্তমানে বাড়তে থাকা জ্বালানির দাম, ক্রেতাদের মধ্যে চাহিদা কমে যাওয়া, ভারত স্টেজ ফোর থেকে ভারত স্টেজ ফাইভে উত্তীর্ণ হওয়া সংক্রান্ত বেশ কিছু সমস্যায় ভুগছে। পাশাপাশি বেড়ে গিয়েছে বিমা সংক্রান্ত খরচ। এই মুহূর্তে গাড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা তাই এ ধরনের সমস্যা মেটানোর জন্য দ্বিতীয় নরেন্দ্র মোদি সরকারের দিকে তাকিয়ে, পাশাপাশি গাড়ি শিল্পে অক্সিজেন দেওয়ার জন্য কিছু নতুন পন্থাও চায় তারা।

ফেডারেশন অটোমোবাইল ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনস-এর সভাপতি আশিস ভরদ্বাজ কালে জানিয়েছেন, তাঁরা চান অটো শিল্পের উন্নতিতে সরকার কিছু সাহসী পদক্ষেপ করুন, যাতে উন্নয়ন দ্রুত হয় অথচ নিরাপত্তা ও দূষণ সংক্রান্ত বিষয়গুলিও ক্ষতিগ্রস্ত না হয় কোনওভাবে। তাঁদের মতে, এ জন্য প্রয়োজন জিএসটি বর্তমান ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৮ শতাংশ করা, সম্ভব হলে সেস কমানো। বর্তমানে গাড়ির দাম অস্বাভাবিকহারে বেড়েছে, জিএসটি কমে গেলে ক্রেতাদের মধ্যে গাড়ি কেনার আগ্রহ বাড়বে, চাঙ্গা হবে বাজার। আর গাড়ি শিল্প অক্সিজেন পেলে আনুষঙ্গিক অন্যান্য ক্ষেত্রও অক্সিজেন পাবে, সব মিলিয়ে উপকৃত হবে দেশের অর্থনীতি।

দেখে নেওয়া যাক গাড়ি শিল্পের দাবিগুলি

ক) এমএসএমইডি আইন ২০০৬-এর আওতায় অটোমোবইল ডিলার্স ওয়ার্কশপ ও সার্ভিস স্টেশনগুলিকে আনতে হবে। এই অটোমোবাইল শিল্প থেকে ২৫ লাখ মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হয়, তাই ভর্তুকি ও ইনসেনটিভের মত সাহায্য অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া ঋণে সুদের হার কম করা প্রয়োজন।

খ) কমানো হোক কর্পোরেট ট্যাক্স। যে সব নতুন ছোট বেসরকারি সংস্থার বার্ষিক টার্নওভার ২৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত, তাদের সরকার যে হারে কর্পোরেট ট্যাক্সে ছাড় দিয়েছে সেই একই হারে কর কমানো হোক প্রপ্রাইটারি ও পার্টনারশিপ ফার্মের ক্ষেত্রে।

গ) ৫,০০০ টাকার বেশি লেনদেন হলে ব্যাঙ্কগুলির ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডে নির্দিষ্ট টাকা চার্জ করা বন্ধ হোক। এর ফলে ব্যবসা করা সহজ হবে, ডিজিটাল পেমেন্টের দিকে বেশি ঝুঁকবেন মানুষ।

ঘ) ডিলারদের মধ্যে গাড়ি কেনাবেচা বা সেকেন্ডহ্যান্ড গাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে ডিলারদের টিসিএস দেওয়া থেকে ছাড় দেওয়া হোক।

ঙ) সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ির ক্ষেত্রে জিএসটির হার ৫ শতাংশ কমাতে হবে।

এছাড়া সব নতুন গাড়ির ক্ষেত্রে জিএসটির হার নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ বিমার অর্থবৃদ্ধি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত নতুন নিয়মকানুনের ফলে গাড়ির দাম ইতিমধ্যেই বেড়েছে, এই মুহূর্তে জিএসটি কমানোর ফলে কিছুটা দাম কমলে বাজারে গাড়ির চাহিদা তৈরি হবে। দেশজুড়ে ভেহিকল স্ক্র্যাপেজ পলিসি চালু করতে দূষণ যেমন কমবে, তেমনই কমবে জ্বালানির ব্যবহার, বাড়বে নিরাপত্তা, ক্রেতারা আরও বেশি করে গাড়ি কিনতে উৎসাহী হবেন।