নয়াদিল্লি: কেন্দ্রের বর্তমান বিজেপি সরকার যখন ১ ফেব্রুয়ারি বর্তমান মেয়াদের শেষ বাজেট পেশ করবে, তাদের মাথায় নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বেশি ভাবনা থাকবে কৃষি নিয়ে, যা ভারতের চিরাচরিত পেশা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন, ২০০২ নাগাদ দেশের কৃষকের আয় দ্বিগুণ বৃদ্ধি তাঁর সরকারের লক্ষ্য। পর্যবেক্ষক মহলের মত, কৃষির পুনরুজ্জীবনের জন্য সরকারকে ‘স্মার্ট’ টার্গেট সামনে রাখতে হবে। ‘স্মার্ট’ মানে সুনির্দিষ্ট, বাস্তববাদী, পরিমাপযোগ্য, সময় বাঁধা, অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নিতে হবে। কৃষকের আয় বাড়ানোর দাবির সমর্থনে প্রজেকশন রিপোর্ট দিতে হবে, যাতে অন্য যে কোনও শিল্পের মতো তথ্য-পরিসংখ্যান থাকবে।
২০১৯ এর অন্তর্বর্তী বাজেটে চটক, চমক থাকার দরকার নেই। রাজনৈতিক দলগুলির ভোট পাওয়ার সময় ছাড়, সুবিধা ঘোষণার রাস্তা থেকে সরে এসে আর্থিক বিচক্ষণতার পরিচয় দেওয়া উচিত। এজন্য পরবর্তী আর্থিক বছরের জন্য বাজেট তৈরির আগে বছর শেষে বিভাগীয় কর্তাদের কাঠগড়ায় না তুলে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে তাঁদের কাছে খোঁজখবর করা উচিত। পাশাপাশি বড় বড় ঘোষণা করে সাফল্যের ঢাক পেটানোর সস্তা মানসিকতা ত্যাগ করা উচিত। মোদি সরকার সাড়ে ৪ বছরের শাসনে বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ করেছে। কৃষিঋণ দেওয়া, হিমঘর, জলসেচ, পরিকাঠামো, চাষির আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দও করেছে। যদিও চাষিদের ধারণা বদলানোয় সফল হয়নি তারা। সদ্য কয়েক মাস আগের বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে ছেড়ে কৃষিঋণ মকুবের প্রতিশ্রুতিতে সাড়া দিয়ে বিরোধীদের ভোট দিয়েছে তারা। এবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর উচিত, ২০১৯ এর ভোটের আগে শেষ বাজেটে গত ৫ বছরের রিপোর্ট কার্ড দেবেন, আগামী দিনে কৃষিতে প্রত্যাশিত সাফল্যের জন্য দরকারী সংস্কারের ব্যবস্থাগুলি ঘোষণা করবেন।


এদিকে আগামী বাজেটে কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ বাড়িয়ে রেকর্ড ১২ লক্ষ কোটি টাকা করতে পারে কেন্দ্র। এমনটাই খবর সূত্রের। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯-২০-র বাজেট পেশ হবে।চলতি অর্থবর্ষে সরকার কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১১ লক্ষ কোটি টাকা ধার্য করেছে। সূত্রের খবর, কৃষি ক্ষেত্রে  ঋণের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি বছরই বাড়িয়েছে সরকার। এবারও সেই লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ বা ১ লক্ষ কোটি টাকা বেড়ে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে হতে পারে ১২ লক্ষ কোটি টাকা।সূত্রের খবর, বিগত বছরগুলিতে কৃষি ক্ষেত্রে ঋণের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। আর সেই লক্ষ্যমাত্রা প্রতি অর্থবর্ষেই ছাপিয়ে গিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৭-১৮ তে কৃষকদের ১১.৬৮ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছিল, যা ওই অর্থবর্ষে ধার্য লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।একইভাবে ২০১৬-১৭-তে ফসল ঋণ দেওয়া হয়েছে ১০.৬৬ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা ৯ লক্ষ কোটি টাকার চেয়ে অনেকটাই বেশি।কৃষি উত্পাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল কৃষি ঋণ। প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ সুলভ হলে কৃষকদের চড়া হারে সুদে বাইরে থেকে ঋণ না নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।সাধারণত কৃষি ঋণে সুদের হার ৯ শতাংশ। যদিও স্বল্পমেয়াদের জন্য সহজ সুদের হারে কৃষি ঋণ যোগাতে সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়।নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋণ শোধ দিলে তিনি ৩ শতাংশ ইনসেনটিভ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কার্যকরী সুদের হার হয় ৪ শতাংশ।