কলকাতা: ক’দিন ধরে রাজ্যজুড়ে বৃষ্টির ধারাপাত। বিপদে অসংখ্য মানুষ। আর এই দুর্যোগের মধ্যেই কলকাতায় ভেঙে পড়ল পুরনো বাড়ির একাংশ! মৃত্যু হল দু’জনের!
তালতলা থানা এলাকার ১০ নম্বর ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিট। ৩ তলা এই বাড়িটির বয়স একশো বছরেরও বেশি। ৮-১০টি পরিবারের পাশাপাশি বাড়ির নিচতলায় রয়েছে বেসরকারি সংস্থার অফিস। স্থানীয়দের দাবি, সোমবার সকালে যখন বৃষ্টি হচ্ছিল, তখন থেকেই নড়ছিল বাড়িটি!
বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ ঘটে যায় দুর্ঘটনা! আচমকাই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বাড়ির পিছন দিকের একটি অংশ! বাড়ি নড়ায় আতঙ্কিত হয়ে, অনেকেই বাড়ি থেকে আগেই বেরিয়ে চলে এসেছিলেন। কিন্তু তখনও রয়ে গিয়েছিলেন কয়েকজন। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে তাঁদের বের করে আনে দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।
কিন্তু তখনও চিন্তামুক্ত হতে পারেননি স্থানীয়রা। তাঁরা বলাবলি করছিলেন, আরও অনেকে ভিতরে আটকে রয়েছে! বিকেলে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে দু’জনকে উদ্ধার করে দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁদের মৃত ঘোষণা করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বছর আটত্রিশের হিমাদ্রী পাহাড়ি একটি বেসরকারি সংস্থায় হিসেবরক্ষকের কাজ করতেন। অপরজন হনসা সাউ, এই বাড়িরই বাসিন্দা। আগামী বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিত সে।
গোটা ঘটনায় দমকলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে এলাকার মানুষ। স্থানীয়দের দাবি, এক থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে মির্জা গালিব স্ট্রিটে, দমকলের সদর দফতর থাকা সত্ত্বেও, ফোন পাওয়ার প্রায় এক ঘণ্টা পর গাড়ি আসে! খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান মেয়র তথা দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়।
এরকম জরাজীর্ণ বাড়ি ভেঙে আগে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এমনকি প্রাণ পর্যন্ত গিয়েছে। অনেকক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, শরিকি বিবাদে থমকে থাকে বাড়ির মেরামতি। এই ছবিটা বদলাতে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। বিপজ্জনক বাড়ির বিপদ থেকে রক্ষার জন্য, জুলাই থেকেই চালু হয়েছে নয়া প্রকল্প।
এই প্রকল্প অনুযায়ী, প্রথমে বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দাদের নোটিস পাঠানো হবে। মেরামতির জন্য তাঁদের নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে। ওই সময়ের মধ্যে বাসিন্দারা মেরামতি করতে না পারলে, দায়িত্ব দেওয়া হবে ডেভলপারকে। তিনিই বিপজ্জনক অংশ ভেঙে দিয়ে নতুন করে নির্মাণ করবেন। এতে অবশ্য ওই বাড়ির বাসিন্দাদের অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকবে।
কিন্তু তার মধ্যেই ঘটে গেল এই দুর্ঘটনা। তালতলার দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাড়িটির আশপাশে আরও বেশ কয়েকটি এরকম পুরনো বাড়ি রয়েছে। অনেক জায়গাতেই ঝুলছে পুরসভার বিপজ্জনক বোর্ড।