কলকাতা: দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনামাফিক ছক কষে ফিল্মি কায়দায় রবিবার ভোররাতে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের এই বিশাল পাঁচিল টপকে পালাল ৩ বাংলাদেশি বন্দি। শনিবার রাতের এই ঘটনায় বড়সড় প্রশ্নের মুখে আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের নিরাপত্তা!
অন্যদিনের মতো রবিবার সকালেও বন্দিদের গণনা হচ্ছিল। সেই সময় দেখা যায়, ফারুখ হাওলাদার, ইমন চৌধুরী ও ফিরদৌস শেখের খোঁজ মিলছে না! শুরু হয় তল্লাশি! কিন্তু খোঁজ মেলেনি! গোটা বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যায় জেল কর্তাদের কাছে! কিন্তু যতক্ষণে ধরা পড়ে, ততক্ষণে পাখি ফুড়ুৎ!
পলাতক তিন বন্দি-সহ আশি জন থাকত ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক তলায়। এই ওয়ার্ডটিই জেলের মধ্যে সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে পুরনো! সেখান থেকেই শীতের রাতে চম্পট দিল এই তিন বন্দি! যে ঘটনায় উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য!
সূত্রের খবর, আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একতলায় ৮০ জন বন্দির সঙ্গে থাকত এই তিনজনও। আগে থেকেই ধারাল হ্যাক্সো ব্লেড দিয়ে সেই ওয়ার্ডেরই একটি গরাদ কেটে রেখেছিল তিন জন। সেই গরাদ দিয়েই সামান্য ফাঁক গলে একে একে তিন জন বেরিয়ে যায়।
জেলের নিয়মানুযায়ী, প্রতি মাসে বন্দিরা পরিবারের কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিতে পারেন। সেই টাকা। জেল সুপারের কাছে জমা থাকে। বন্দিরা প্রয়োজনমত সেই টাকা নেন। সূত্রের খবর, সেই টাকা দিয়েই জেলের ক্যান্টিন থেকে মোয়া কেনে তিন বাংলাদেশি বন্দি। সহ-বন্দিদের ওই মোয়া খাওয়ায় তারা।
তদন্তকারীরা মনে করছেন, মোয়ায় মাদক মেশানো ছিল! কারণ, জানা গিয়েছে রাতে মোয়া খেয়েই বেহুঁশ হয়ে পড়েছিল বাকি বন্দিরা! আর সেই সুযোগেই গরাদ কেটে জেল থেকে পালায় তিন বন্দি! পাঁচিল টপকাতে ব্যবহার করা হয় পাইপের টুকরো, পেয়ারা গাছের ডাল ও শাল!
সূত্রের খবর, গরাদ কেটে বাইরে বেরিয়ে পাঁচিল পর্যন্ত পৌঁছনোর পরের পরিকল্পনাও ছিল প্রস্তুত। আগে থেকে জোগাড় করে রাখা জলের পাইপের সরু মাথা বেঁকিয়ে, আঁকশি করে জেলের পাঁচিলের মাথায় গেঁথে দেয়। তার সঙ্গে শক্ত পেয়ারা গাছের ডাল বেঁধে বেঁধে দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে নিয়েছিল। তারপর শাল ছিঁড়ে সেগুলি পাকিয়ে পাকিয়ে গিঁট তৈরি করে। সেই গিঁট ধরেই জেল টপকায়।
সূত্রের খবর, বড়দিনের একটি অনুষ্ঠানে বন্দিদের শাল উপহার দিয়েছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সেই শালকেই দড়ি হিসেবে ব্যবহার করেই শনিবার রাতে জেল থেকে উধাও হয়ে যায় তিন বাংলাদেশি বন্দি!