কলকাতা: খুন নাকি দুর্ঘটনা? বালিগঞ্জের বহুতলে আবেশ দাশগুপ্তর খুনে ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে রহস্য।
পুলিশ সূত্রে দাবি, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, আবেশ সহ ১৭ জন কিশোর-কিশোরী শনিবার পার্টিতে যায়। তবে বহুতলের বেসমেন্টের পার্কিং লটে যেখানে ঘটনা ঘটে, সেখানে উপস্থিত ছিল ৪-৫ জন। প্রত্যেকেরই বয়ান নিয়েছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রে দাবি, আবেশের বন্ধুরা প্রত্যেকেই দাবি করেছে, তারা কেউ কোনও হাতাহাতি দেখেনি। বরং তাদের দাবি, বেসমেন্টে আবেশ একটি কাচের বোতল বগলে ধরে দাঁড়িয়েছিল। ভারসাম্য রাখতে না পেরে সেই অবস্থাতেই সে পড়ে যায়। তখনই কাচের বোতলের একটি অংশ ভেঙে তার হাতে ঢুকে যায়।
এই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, হাইপো-ভলিউমিক শক থেকে আবেশের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। অর্থাৎ ধারাল কিছুর আঘাতে ক্ষত এবং তা থেকে দীর্ঘক্ষণ রক্তপাতের ফলে মাল্টি অর্গ্যান ফেলিওর। কিন্তু, মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। তদন্ত এখনও চলছে। মৃত আবেশের বগলের কাছে একটি ছ’ইঞ্চি বাই চার ইঞ্চির একটি গভীর ক্ষতচিহ্ন রয়েছে।
পুলিশের পরিভাষায় এটি ল্যাসারেটেড উন্ড। অর্থাৎ ধারাল কিছুতে আবেশের এমন আঘাত লেগেছে, যার ফলে চামড়ার নীচে থাকা শিরা ও ধমনী কেটে গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে দাবি, আবেশের শরীরে কিছু ছড়ে যাওয়ার চিহ্নও মিলেছে। যা দেখে তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, আঘাত লাগার পর বন্ধুরা আবেশকে বেসমেন্টে টেনে নিয়ে যায়।
সেখানেই আবেশের শরীর থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে। পুলিশের অনুমান, তাকে হাসপাতাল অবধি নিয়ে যেতে যেতে অনেকে দেরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, সেক্ষেত্রেও তদন্তকারীদের মনে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, আবেশকে ওরকম রক্তাক্ত দেখেও কেউ তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল না কেন? রক্তপাত বন্ধের চেষ্টা না করে সবাই তাকে ওই অবস্থায় ফেলে রেখে চলে গেল কী করে? আবেশের পরিবারও দুর্ঘটনার তত্ত্ব মানতে নারাজ।
বেসমেন্টে তাদের মধ্যে কী হয়েছিল, তা জানতে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। যদিও, বহুতলের পরিচালন সমিতির সভাপতি কিশোর ভিমানির দাবি, যে জায়গায় ঘটনা ঘটেছে, সেখানে কোনও সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না।
পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের সন্ধানে রবিবার তদন্তকারীরা চার দফায় বহুতলের বেসমেন্টে পার্কিং লটে যান। ঘটনাস্থল থেকে নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। তবে পুলিশের মতে, এই ঘটনায় সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। আবেশের পরিবারের সদস্যরা ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়ার ভিডিও রেকর্ডিংয়ের আর্জি জানিয়েছেন। কিন্তু, কাটাপুকুর মর্গে সর্বক্ষণের ভিডিও রেকর্ডিংয়ের পরিকাঠামো নেই।তাই শেষমেশ এদিন পুলিশ মর্গে ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।