কলকাতা: মডেল-অভিনেত্রী সনিকা সিংহ চৌহানের মৃত্যুর মামলায় সোমবার পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়।
শুক্রবার দুপুরে তাঁকে তোলা আলিপুর আদালতে তোলা হয়। বিক্রমের আইনজীবী দাবি করেন, বিক্রমের বিরুদ্ধে প্রথমে ৩০৪-এর এ ধারায় গাফিলতির জেরে মৃত্যুর মামলা দায়ের করে পুলিশ। গত ৫ ই মে, তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। দু’বার তাঁকে তদন্তকারী অফিসাররা ডেকে পাঠিয়েছেন। দু’বারই হাজির হন বিক্রম। তদন্তে তিনি সব রকমের সাহায্য করছেন। তাই তাঁর জামিনের আর্জি মঞ্জুর করা হোক। এ ছাড়া, বিক্রমের আগাম জামিনের আর্জির প্রেক্ষিতে, কলকাতা হাইকোর্টে আগামী মঙ্গলবার শুনানি। এই পরিস্থিতিতে, বিক্রমকে জামিন দেওয়া হোক।
বিক্রমের জামিনের আর্জির বিরোধিতা করতে উঠে সরকারি আইনজীবী বলেন, বিক্রমের বিরুদ্ধে ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি প্রায় ৪০ দিন ধরে ফেরার। তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গে তিনি লুকোচুরি খেলেছেন। এছাড়া, বার বার তদন্তের অভিমুখ পাল্টানোর চেষ্টা করেছেন। তদন্তকারী অফিসারকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। বিক্রমকে হেফাজতে নিয়ে এই গোটা ঘটনার পুনর্নির্মাণ এবং কী উদ্দেশ্যে তিনি এমন করলেন, সেটা জানা দরকার।
সরকারি আইনজীবী সৌরিন ঘোষাল বলেন, মোটিভেশন কী ছিল জানা দরকার এবং রিকনস্ট্রাকশন চাই। বিক্রম অনেক মিথ্যে বলেছেন। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিক্রমকে সোমবার পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
প্রসঙ্গত, ২৯ এপ্রিল গভীর রাতে রাসবিহারী মোড়ের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের গাড়ি। মৃত্যু হয় মডেল সনিকা সিংহ চৌহানের। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন অভিনেতা বিক্রম। এই ঘটনায় অভিনেতা বিক্রমের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রথমে ৩০৪-এর এ ধারায় গাফিলতির জেরে মৃত্যু, বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানো এবং সম্পত্তি নষ্টের মতো জামিনযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয়।
এ নিয়ে নানা মহল সমালোচনায় সরব হয়। প্রশ্ন ওঠে, অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায় এবং শিল্পী কালিকাপ্রসাদের গাড়ির চালক অর্ণব রাও, দু’জনের ক্ষেত্রে দু’রকম আইন কেন? সেই ঘটনার ৬৯ দিনের মাথায় অবশেষে বিক্রম পুলিশের জালে ধরা পড়ে। বৃহস্পতিবার রাতে, কসবার একটি মলের সামনে থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে দাবি, এরপর বেশ কিছু দিন ধরেই অভিনেতা বিক্রম বেপাত্তা। তিনি মোবাইল ফোনও ব্যবহার করছিলেন না। সূত্রের খবর, এরই মাঝে পুলিশ খবর পায়, অভিনেতা বিক্রম, তাঁর টালিগঞ্জের এক বন্ধুর সঙ্গে একমাত্র যোগাযোগ রাখছিলেন। সেই বন্ধুই তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার জন্য অ্যাপ নির্ভর ট্যাক্সি বুক করে দিতেন।
এ নিয়ে পুলিশ নজরদারি বাড়ায়। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতে তারা জানতে পারে, ওই বন্ধুর মাধ্যমেই ফের ক্যাব ভাড়া করেছেন বিক্রম। রয়েছেন কসবার একটি মলের কাছে। রাত সোয়া ১২টা নাগাদ সেখান থেকেই বিক্রমকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতার করার পর বিক্রমকে টালিগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সূত্রের খবর, পুলিশ লক আপে সারা রাত না শুয়েই কাটান তিনি। কখনও থানার লক আপের মেঝেতে বসে থেকেছেন। কখনও চেয়ারে। সকালে ব্রেকফাস্টের জন্য বলা হলেও কিছু খাননি। পরে শুধু চা খান।
বিক্রমের গাড়ি থেকে যে বোতল উদ্ধার হয়েছিল, তার ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে পেয়েছে পুলিশ। সূত্রের দাবি, ফরেন্সিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই বোতলে জলের সঙ্গে মদ মেশানো ছিল। এতে পুলিশের অনুমান, হোটেলের পর গাড়িতেও হয়ত মদপ্যান করা হয়েছিল।
এদিকে, এদিন সকালে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তর ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিক্রমের আইনজীবী বলেন, তাঁর মক্কেলের আগাম জামিনের আর্জির প্রেক্ষিতে, আগামী ১৩ জুলাই শুনানির কথা ছিল। বৃহস্পতিবার দু’পক্ষের আইনজীবীদের উপস্থিতিতেই এই দিন ধার্য হয়। তার আগে বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ‍ কেন বিক্রমকে পুলিশ গ্রেফতার করল?
বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত তখন সরকারি আইনজীবীর উদ্দেশে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনাদের উপরস্থিতিতেই শুনানির দিন ঠিক করা হয়েছিল। তার আগেই পুলিশের এই পদক্ষেপের কারণ কী? আমি মামলার নিষ্পত্তি করছি না। আগামী মঙ্গলবার শুনানি হবে।