কলকাতা: প্রতিটি বিশৃঙ্খলাই এক একটা ভাবনার জন্ম দেয়। আর সেই ভাবনা থেকেই প্রসব করে শিল্প। কবিতা, গান, কথা কিংবা সংলাপ, শিল্পের মাধ্যম যাই হোক, তার উদ্দেশ্য সিংহভাগ ক্ষেত্রেই এক হয়ে থাকে। আর সেই উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্য যাদের আছে তাঁরাই একে একে এসে সমবেত হয়ে সেই শিল্পের দোসর হয়ে যান। হাতের কাছেই আছে জ্বলন্ত উদাহরণ। নাগরিকত্ব সংশোধিত আইনের বিরোধিতায় কবিতা লিখলেন জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমির আজিজ। ‘সব ইয়াদ রাখা জায়েগা’, আজিজের এই কবিতা জামিয়ার সিংহদুয়ার দিয়ে বেরিয়ে দিল্লির রাজপথ হয়ে পৌঁছে গিয়েছিল জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে সেই কবিতা আবার হাঁটতে হাঁটতে চলে এল শাহিনবাগে। তারপর ওই কবিতাই যে কখন উড়ান দিয়ে চলে গেল লন্ডনে, তা টেরই পাওয়া যেত না যদি না রজার ওয়াটার্স তা আবৃত্তি করতেন। কবিতার অর্থ একই থাকল, শুধু ভাষান্তর হল। লন্ডনে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মুক্তির দাবিতে যে আন্দোলন চলছে সেখানে পঠিত হল আজিজের কবিতা।


কবিতা এখানেই থেমে যায়নি। ফের চলে এল কলকাতায়, নজরুল মঞ্চে। স্রেফ ভাষা বদলে গেল। ৭ মার্চ, শনিবার নাগরিক সমাজ বিশেষত শিল্পমনস্ক মানুষ এবং শিল্পীরা সমবেত হয়েছিলেন দক্ষিণ কলকাতার নজরুল মঞ্চে। অপর্ণা সেন, শ্রীজাত, শিলাজিৎ, দেবজ্যোতি মিশ্র, কৌশিক সেন, রূপম ইসলাম, অনুপম রায়, পরমব্রত, অনির্বাণ থেকে ঋদ্ধি এবং আরও অনেকে এদিন সমবেত হয়েছিলেন স্রেফ নিজেদের কথা বলতে নয়। বরং সময়ের দাবি মেনেই গোটা দেশে যে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার বিরুদ্ধে কথা বলতে। অপর্ণা সেন এসেছিলেন দেশের এই অস্থির অবস্থায় টালমাটাল পরিস্থিতিতে যেখানে সর্বত্র হানাহানি, মারামারি, খুনোখুনি হচ্ছে, সেখানে ভালবাসার কথা বলতে, সৌভ্রাতৃত্বের কথা বলতে।  ‘অরাজক’ সময়ে বিশ্বের কোনও শিল্পীই মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন না। মুখ ফেরাতে পারেননি তিনিও।


এই সমাগম নিয়ে কবি শ্রীজাতর বক্তব্য, “দেশজুড়ে চলা অসহিষ্ণুতা ও অস্থিরতার বাতাবরণের বিপরীতে দাঁড়িয়ে একজোট হওয়ার প্রয়াসের নামই কোরাস। এই অন্ধকার সময়ে দাঁড়িয়ে আলো খোঁজার চেষ্টা। গানে, কথায়, সংলাপে, কবিতায় প্রতিবাদ করা, এটাই কোরাস।”  আর এখানেই ফের একবার ফিরে এল আমির আজিজের কবিতা। এবার অনির্বাণ ভট্টাচার্যের কণ্ঠে। ‘সব ইয়াদ রাখা জায়েগা’ কবিতার ভাষান্তর হল। বালা সংস্করণে আজিজের কবিতা মাথা তুলে দাঁড়াল, ‘সব মনে রাখা হবে/সব কিছু মনে রাখা হবে।’ সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়া মাত্রই তা ভাইরাল হয়ে যায়। হু হু ছড়িয়ে পড়ে এক দেওয়াল থেকে অন্য দেওয়ালে।