কলকাতা: দীর্ঘ সাড়ে ৬ মাস পর আজ প্রথম শিম্পাঞ্জি বাবুর খাঁচার সামনে পাতলা ভিড়। বড় এনক্লোজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাঘ। আনলক পর্বে শুক্রবার থেকে খুলে গেল আলিপুর চিড়িয়াখানার দরজা। খুলল রাজ্যের অন্যান্য চিড়িয়াখানাও। কিন্তু বন্ধ চিড়িয়াখানায় কেমন ছিল পশুপাখিরা? প্রথমদিনে লোকজন দেখে কেমন প্রতিক্রিয়া তাদের? এবিপি আনন্দকে জানাল আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।


৪১ বছর ধরে চিড়িয়াখানায় কাজ করছেন সুভাষচন্দ্র দে। বর্তমানে অ্যানিম্যাল সুপারভাইজারের পদে রয়েছেন তিনি। এবিপি আনন্দকে বললেন, 'আমাদের মত পশুপাখিরাও প্রথম এই পরিস্থিতি দেখছে। কথা বলতে না পারলেও ওরা বুঝতে পেরেছিল পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। অনেক পশুর জন্ম হয়েছে এখানে। ছোট্ট থেকেই প্রচুর মানুষ দেখে। এতদিন ফাঁকা চিড়িয়াখানায় ওরা ঝিমিয়ে থাকত। শীতকালে রোজ প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মতো লোক আসেন চিড়িয়াখানায়। ওরাও অভ্যস্ত খাঁচার সামনে গিয়ে মানুষ দেখতে।'


   
   


লকডাউনে শূন্য চিড়িয়াখানায় ঠিক কী কী পরিবর্তন হয়েছে পশুদের ব্যবহারে? প্রায় ১৫ বছর হল চিড়িয়াখানায় রয়েছে শিম্পাঞ্জি বাবু। খাঁচার বাইরে ভিড় জমলেই আনন্দে হাততালি দিয়ে ওঠে সে। লাফালাফি করে দাপিয়ে বেড়ায় গোটা এনক্লোজার। ১৭ মার্চের পর আজ ফের দর্শকদের মুখ দেখতে পেয়ে একটু 'খুশি' বাবু। প্রথম থেকেই তার দেখাশোনার ভার সামলাচ্ছেন গৌতম বাগ নামে চিড়িয়াখানার এক কর্মী। এবিপি আনন্দকে তিনি বললেন, 'আমি দীর্ঘ এত বছর বাবুকে দেখছি। ওর বয়স প্রায় ৪০ বছর হল। খাঁচার সামনে ভিড় দেখে ওর অভিব্যক্তিগুলো মনে রাখার মতো। কখনও হাততালি দেয়, কখনও নাচে, লাফায়, খেলা করে। ঠিক যেন নতুন মানুষের সঙ্গে আলাপ করছে। এতদিন কারও মুখ না দেখতে পেয়ে একাকীত্ব গ্রাস করেছিল বাবুকে। খাবার খেয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকত নিজের এনক্লোজারে। কখনও ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করত না। আজ এতদিন পর মানুষ দেখে একটু খুশি বাবু। অনেক বছর ধরে ওকে দেখেছি বলেই পরিবর্তনটা বুঝেছি।'


   
   
  


অতিমারীর মধ্যেই চিড়িয়াখানার মারাত্মক ক্ষতি করেছে ঘূর্ণিঝড় উমপুন। তছনছ করে দিয়েছে বাঘের এনক্লোজার-সহ একাধিক জায়গা। আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা কানাইলাল সামন্ত জানাচ্ছেন, এতদিন দর্শক ছিল না বলে বাঘেদের বাইরের এনক্লোজারে রাখার প্রয়োজন হয়নি। নিজেদের খাঁচার ভিতরেই থাকত ওরা। আজ থেকে ফের ওদের বাইরের বড় এনক্লোজারে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।


   
   


অ্যানিম্যাল সুপারভাইজার আরও জানিয়েছেন, শিম্পাঞ্জি ছাড়াও ভিড় পছন্দ করে জিরাফ, হাতি, হরিণরাও। করোনা পরিস্থিতিতে কোনও পশুই অসুস্থ হয়ে পড়েনি। তবে এতদিন দর্শকদের না দেখে মনমরা হয়েছিল তারা। আজ জনসমাগম কম হলেও ধীরে ধীরে চিড়িয়াখানা আগের অবস্থায় ফিরবে বলেই আশা কর্তৃপক্ষের।


   
   


চিড়িয়াখানা খুললেও কাটেনি করোনা আতঙ্ক। দর্শকদের জন্য রয়েছে ঠিক কী কী সুরক্ষাব্যবস্থা? কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হল, বেশ কয়েক ধাপ পরীক্ষা পেরিয়ে দর্শকদের প্রবেশ করতে হবে চিড়িয়াখানায়। মাস্ক ছাড়া কাউকেই প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। থার্মাল স্ক্রিনিংয়ে জ্বর ধরা পড়লে তাঁকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। স্যানিটাইজেশন টানেলের মধ্যে দিয়ে প্রত্যেককে প্রবেশ করতে হবে। পশুপাখির খাঁচার সামনে সকল দর্শককে মেনে চলতে হবে ৬ ফুটের দূরত্ববিধি।