কলকাতা:  কোথায় কোথায় তৃণমূলের হাতে বিজেপি আক্রান্ত সেই গল্প শুনতে আসিনি। কোথাও কি পাল্টা দিতে পেরেছেন? সেই গল্পটা শোনান। কলকাতায় এসে মারের পাল্টা মারের দাওয়াই অমিত শাহের। এ ভাবে উস্কে লাভ নেই। জবাব তৃণমূলের।

শিকাগোয় স্বামী বিবেকানন্দের বক্তৃতার ১২৫ বছরপূর্তি উদযাপনে কলকাতায় এসেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। সোমবার সকালে দলের রাজ্য কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। প্রথমেই জানিয়ে দেন, তিনি বাংলার বিজেপি নেতাদের বক্তব্য শুনতে এসেছেন। তখন একে একে রাজ্যের নেতারা বলতে শুরু করেন। তাঁদের প্রধান অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি কর্মীরা ভয়ঙ্কর সমস্যার মধ্যে আছেন। কারণ, কোথাওই ঠিক মতো কর্মসূচি করা যাচ্ছে না। তৃণমূল লাগাতার আক্রমণ করছে।

সূত্রের খবর, অমিত শাহ তখন বলেন, 'এই গল্প শুনতে আমি আসিনি। কোথাও কি পাল্টা দিতে পেরেছেন? তা হলে সেই গল্পটা শোনান।'

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে পাল্টা সুর চড়িয়েছে তৃণমূল।

তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য 'ওরা ভাবছে গোধরা করবে। না হলে ভোটে জিততে পারবে না। এ সবের এখানে কোনও চান্স নেই। যতই উত্তেজক মন্তব্য করুন, আমরা উত্তজিত হব না। তৃণমূল প্রোভোকড হবে না।'

দলের সর্বভারতীয় সভাপতির সুর অবশ্য আগেই শোনা গিয়েছে বিজেপির রাজ্য সভাপতির গলায়।

গত ২২ অগাস্ট দিলীপ ঘোষ মন্তব্য করেন, 'দিদির ভাইদের বলছি। এখনই পাল্টে যান, নাহলে পাল্টে দেব। বিজেপি যখন ধরে সহজে ছাড়ে না। পালিশ করে ছেড়ে দেব আমি একটা কথা বলে যাই। চমকাবেন না। কাপড়কাচা করে দেব। মুখের জিওগ্রাফি চেঞ্জ করে দেব। হাসপাতালে যাওয়ার দরকার পড়বে না।'

তারপর গত ৪ সেপ্টেম্বর তিনি বলেন, বাংলায় যে পুলিশ ঠ্যাঙাবে, সেই আসবে ক্ষমতায়। পুলিশ ঠ্যাঙান, ধোলাই দিন, এটা গণতান্ত্রিক অধিকার। একটা ঠ্যাং ভাঙলে দু’টো ঠ্যাং ভাঙুন।'

বঙ্গজয়ের জন্য বিজেপি মরিয়া। সেই লক্ষ্যে ঝাঁপানোর জন্য এ দিন নির্দেশ দেন অমিত শাহ।

সূত্রের খবর বৈঠকে তিনি বলেন, বিজেপি সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে গিয়েছে এটা মনে করার কোনও কারণ নেই। এখনও দেশের অনেক রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় নেই। সেই রাজ্যগুলিতে জিততে হবে। বাংলাতেও জিততে হবে। সেটা যেদিন পারবেন, মনে করবেন আকাশ ছুঁতে পেরেছি।

নরেন্দ্র মোদীর প্রধান সেনাপতি কলকাতায়। এই পরিস্থিতিতে, এ দিন তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়ও। তাঁর বক্তব্য, 'পুলিশ ও সংগঠনকে ব্যবহার করে চারিদিকে অত্যাচার বেড়েই চলেছে। ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আমরা কংগ্রেসমুক্ত ভারতের কথা বলছি। সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূলমুক্ত পশ্চিমবঙ্গেরও কথা বলছি। রাজ্য সরকার না চাইলে কেন্দ্র পঞ্চায়েত ভোটে সেন্ট্রাল ফোর্স দিতে পারে না। পঞ্চায়েত ভোটে আরও সন্ত্রাস বাড়বে।'

এরপরই বাবুল সুপ্রিয়র দিকে পাল্টা কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে তৃণমূল।

পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, '২০১১তে ৮৬ শতাংশ পঞ্চায়েত ছিল সিপিএমের দখলে। রাজনীতির ও লোক নয়। গানটান ভাল গায়। এ ধরনের লোক রাজনীতির কথা বললে খুব সন্দেহ হয়। কেউ শিখিয়ে দিয়েছে মনে হয়। ২০১৬ সালে তো ইলেকশন কমিশন কতজনকে সরিয়ে দিল। তারপরেও তো ২০১১র থেকে বেশি সিট পেয়েছে তৃণমূল।'

অমিত শাহের তিন দিনের সফরের শুরুতেই পারদ একেবারে তুঙ্গে।