কলকাতা: বাগবাজারে গতকাল রাতের বিধ্বংসী আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ১২২ বছরের পুরনো উদ্বোধন পত্রিকার অফিসে। কার্যালয়ের একতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত পিছনদিকের জানলা, দরজা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দোতলায় সারদানন্দ হল, তিনতলায় লাইব্রেরির একাংশ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুনের ভয়াবহতা এতটাই বেশি ছিল যে পাঁচতলার ওপরের ছাদের গাছও ঝলসে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিনতলার সম্পাদকীয় কার্যালয়ও।
বুধবার সন্ধেয় আগুনের গ্রাসে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বাগবাজারের হাজারহাট এলাকার অসংখ্য ঝুপড়ি। পর পর সিলিন্ডার বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে চারপাশ। আগুন ছড়িয়ে পড়ে বাগবাজার উদ্বোধন পত্রিকার অফিসের একাংশেও।
কারও হারিয়ে গিয়েছে মূল্যবান নথি। কারও পুড়ে ছাই নগদ টাকা। কারও বা ছাইয়ে পরিণত হয়েছে বিয়ের সামগ্রী। ধ্বংসস্তূপ থেকে শেষ সম্বল উদ্ধারের চেষ্টায় ঝুপড়িবাসীরা। বাগবাজারে গতরাতের বিধ্বংসী আগুনে নিঃস্ব প্রায় ৭০০ জন ঝুপড়িবাসী। চারদিকে শুধুই হাহাকার!
১০০টির বেশি ঘর আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে। গতকাল রাতে নিরাশ্রয়দের কোনও রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলেছে বাগবাজার মহিলা কলেজ ও কমিউনিটি হলে।
আজ ভোরেও দেখা যায় ঘটনাস্থলে বিভিন্ন জায়গা থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। তার মধ্যেই ঝুপড়িবাসীরা খুঁজতে শুরু করেন আগুনের গ্রাস থেকে মূল্যবান কিছু বেঁচে আছে কি না।
গতকাল সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ, হঠাৎ আগুন লাগে ঝুপড়িতে। দমকল পৌঁছনোর আগেই ফাঁটতে শুরু করে একের পর এক রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার। প্রথমে দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন পৌঁছয় ঘটনাস্থলে।
কিন্তু আগুনের ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে, তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব ছিল না ওই কয়েকটি ইঞ্জিনের পক্ষে। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় আরও ২২টি ইঞ্জিন। অনেক দূর পর্যন্ত জল ছেটানোর জন্য আনা হয় হাইস্পিড জেট ইঞ্জিন।
ঘটনাস্থলের ঠিক পাশেই বাগবাজারের মায়ের বাড়ির অফিস। বাড়ির তিনতলা পর্যন্ত অফিসের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় আগুনে। পুড়ে গিয়েছে প্রচুর নথিপত্র।
গত দু-দিনে কলকাতায় ৫ ডিগ্রি নেমেছে পারদ। সেই শীতের রাতেই নিরাশ্রয় হয়ে পড়লেন বাগবাজার হাজারহাট এলাকার শতাধিক পরিবার। মাথার উপর ছাদ হারালেন প্রায় ৬০০ জন মানুষ।
তার মধ্যেই দমকল দেরিতে পৌঁছনোর অভিযোগে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যদিও দমকল সূত্রে দাবি, অগ্নিকাণ্ডের জেরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে। তার ফলে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে দেরি হয়েছে।
আগুন নেভাতে গিয়ে জখম হয়েছেন কয়েকজন দমকলকর্মী। রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘরহারা মানুষগুলির জন্য থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। কিন্তু কীভাবে এই বিধ্বংসী আগুন লাগে, তা খতিয়ে দেখছে দমকল।