কলকাতা: শৃঙ্গজয় করেও ঘরে ফেরা হল না! ধৌলাগিরি অভিযানে গিয়ে মৃত্যু হল পর্বতারোহী রাজীব ভট্টাচার্যর।
২ বছর আগে অমোঘ নিয়তি কেড়ে নিয়েছিল 'পাহাড়-কন্যা' ছন্দা গায়েনকে৷ কাঞ্চনজঙ্ঘা পশ্চিম শৃঙ্গজয় করতে গিয়ে আর ফেরেননি ছন্দা৷ মৃত্যু-মুখ থেকে ফিরে এসেছিলেন তাঁরই বন্ধু রাজীব ভট্টাচার্য৷ দগদগে স্মৃতি হয়ে মনে বেঁচেছিল সেই ঘটনা৷
আর, দু’বছর পর? একই নিয়তির শিকার এভারেস্টজয়ী রাজীব৷ নেপালের ধৌলাগিরি শৃঙ্গজয় করতে গিয়ে স্নো-ব্লাইন্ডনেসের শিকার৷ আর অন্তহীন ক্লান্তি৷ বৃহস্পতিবার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন বাঙালি পর্বতারোহী৷ আর, একটি স্বপ্নের মৃত্যু৷ ধৌলাগিরি জয় করতে গিয়ে এই প্রথম মৃত্যু হল ভারতীয় কোনও পর্বতারোহীর৷
জানা গিয়েছে, ১১ এপ্রিল কাঠমাণ্ডু থেকে ধৌলাগিরির উদ্দেশে অভিযান শুরু করেন রাজীব৷ যার উচ্চতা ৮ হাজার ১৬৭ মিটার৷ শেরপা তাসিকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে ধৌলাগিরি বেসক্যাম্পে পৌঁছন তিনি৷ সেখান থেকে প্রথমে ক্যাম্প ওয়ান৷ তারপর আরও বেশি উচ্চতা ক্যাম্প টু৷
ক্যাম্প থ্রি-র অবস্থান শৃঙ্গের খুবই কাছাকাছি৷ ১৯ মে ক্যাম্প থ্রি হয়েই ধৌলাগিরি শৃঙ্গজয় করেন রাজীব৷ কিন্তু, ফেরার আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী হল না৷ ফেরার সময়ই স্নো-ব্লাইন্ডনেসের শিকার৷ সূর্যরশ্মি বরফে প্রতিফলিত হয়ে চোখে পড়ায় দৃষ্টিহীনতা৷ চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না তিনি৷
প্রবল অসুস্থতা নিয়েই এগোতে থাকেন রাজীব, অভিযানের নেশায়৷ ধৌলাগিরির উচ্চতা৷ দুর্গম পথ৷ ক্রমশ কমতে থাকে অক্সিজেন৷ ক্লান্তি গ্রাস করতে থাকে রাজীবকে৷ প্রকৃতির সঙ্গে যুঝেও শেষরক্ষা হল না৷ রাজীবকে কেড়ে নিল ধৌলাগিরি৷ রাজীবের মৃত্যুর খবরে পরিবারে শোকের ছায়া৷
রাজীবের দেহ উদ্ধার করতে শনিবারই কাঠমাণ্ডু রওনা দিচ্ছে যুব কল্যাণ দফতরের মাউন্টেনিয়ারিং দফতরের প্রতিনিধিদল৷ সঙ্গে যাচ্ছেন রাজীবের এক আত্মীয়ও৷
ধৌলাগিরিতে অভিযান করার আগে পাঁচবার ভাবেন পৃথিবীর তাবড় পর্বতারোহীরাও৷ ধৌলাগিরি অভিযানে গিয়েই ২ দিনের জন্য নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন বসন্ত সিংহ রায়ের মত এভারেস্টজয়ী৷ কিন্তু, যাবতীয় ঝুঁকি অগ্রাহ্য করেই এগিয়ে গিয়েছিলেন রাজীব, অভিযানের নেশায়৷
শৃঙ্গজয় হল৷ কিন্তু, শেষরক্ষা হল না৷ চলে গেলেন রাজীব৷ পড়ে রইল একরাশ স্বপ্ন৷