ঝিলাম করঞ্জাই, কলকাতা: রাজ্যে শুরু হল কোভ্যাকসিনের টিকাকরণ। এসএসকেএমে করোনার দেশীয় টিকা নিলেন জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের রাজ্য অধিকর্তা ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা। এ ছাড়াও হায়দরাবাদ থেকে রাজ্যে এল আরও প্রায় ৩ লক্ষ ৩০ হাজার ডোজ। পাঠানো হবে জেলায় জেলায়। কোভিশিল্ডের পর এবার কোভ্যাকসিন। রাজ্যে শুরু হল ভারত বায়োটেকের তৈরি টিকা কোভ্যাকসিনের প্রয়োগ।


বুধবার এসএসকেএম হাসপাতালে প্রথম টিকা নেন ন্যাশনাল হেলথ কমিশন বা জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের রাজ্যের অধিকর্তা সৌমিত্র মোহন এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘কেউ যাতে ভয় না পায়, টিকা নিতে যাতে সবাই এগিয়ে আসেন..তার জন্যই আমরা প্রথম নিলাম।’’


বুধবার শহরে সব মেডিক্যাল কলেজেই কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিন দেওয়া হয়। আরজি কর-এ প্রথম কোভ্যাকসিন নেন মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক জোতির্ময় পাল। ভারত বায়োটেকের করোনা টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল এখনও শেষ হয়নি। সূত্রের খবর, সেই কারণে কোভ্যাকসিন নিতে হলে বাধ্যতামূলক সম্মতিপত্রে সই করতে হচ্ছে প্রত্যেককে। এবিষয়ে ভারত বায়োটেকের তরফে আগেই দাবি করা হয়েছে, সম্মতিপত্রে সই করলে যাঁরা ভ্যাকসিন নিচ্ছেন, পরে তাঁদের শারীরিক সমস্যা হলে চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে তারা। অন্যদিকে, এদিনই হায়দরাবাদ থেকে রাজ্যে এসেছে আরও ৩ লক্ষ ৩০ হাজার কোভ্যাকসিন। রাখা হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের বাগবাজারের ভ্যাকসিন স্টোরে।


এদিনও কলকাতা ও জেলার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে টিকা পাঠানো হয়। অন্যদিকে, সারা দেশে রাশিয়ার করোনা টিকা স্পুটনিক ভি-র তৃতীয় পর্যায়ের ফলাফল বিজ্ঞান পত্রিকা ল্যানসেটে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে রাশিয়ায় এর সাফল্য ৯১ শতাংশ। ভারতেও এর তৃতীয় পর্যায়ে মানবদেহে প্রয়োগ চলছে। কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে এই পরীক্ষামূলক প্রয়োগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক। তিনি বলেন, ল্যানসেটের এই প্রকাশনা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এর ফলে কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাকসিনের পাশাপাশি ভারতের আরও একটি করোনার টিকা পাওয়ার পথ সুগম হবে। স্বাস্থ্য দফতরের মতে বুধবারের টিকাকরণ প্রক্রিয়া মোটের ওপর সন্তোষজনক ছিল।



তবে ট্রায়াল শেষের আগেই করোনা ভ‍্যাকসিনেশন শুরু নিয়ে সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম প্রতিবাদ করেছে‌। ফোরামের অভিযোগ, যে সময়ে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে, ঠিক সেই সময়ে তড়িঘড়ি করোনা টিকাকরণ শুরু করা হয়েছে। কোভ‍্যাকসিনের একই সঙ্গে কিছু সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে তার ট্রায়াল চলছে, পাশাপাশি আবার এই ভ‍্যাকসিনটির প্রয়োগও শুরু করা হয়েছে। গত ১৬ জানুয়ারি থেকেই সারা দেশে কোভিশিল্ড ভ‍্যাকসিন চালু করা হয়েছে, যে ভ‍্যাকসিনটির ট্রায়ালের ক্ষেত্রেও সমস্ত নিয়ম মানা হয়নি।



এই পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের পক্ষে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে -" করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে ভ‍্যাকসিনেশন তখনই কার্যকরি হতে পারে যখন ভ‍্যাকসিনেশনের দ্বারা হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করা সম্ভব হবে। ভ‍্যাক্সিন কোম্পানি গুলির দাবি অনুযায়ী এই ভ‍্যাকসিনগুলির যা কার্যকারিতা রয়েছে, তা যদি সত্যিও হয় তাহলে ৭০% মানুষের ইমিউনিটি তৈরি করতে হলে দেশের সমস্ত মানুষকে অর্থাৎ ১৪০ কোটি মানুষকেই খুব অল্প সময়ের মধ‍্যেই ভ‍্যাকসিনেশন করাতে হয়। আমাদের দেশে সেই পরিকাঠামো নেই। উপরন্তু সরকার সেই দায়িত্বও নিচ্ছে না। তাহলে এত তড়িঘড়ি কেন? ভ‍্যাক্সিনের ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগেই অনৈতিকভাবে ও অবৈজ্ঞানিক ভাবে এর প্রয়োগ কেন? সংগঠনের দাবি করছি ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগে কোভ‍্যাকসিনের প‍্রয়োগ ঘটানো চলবে না এবং ট্রায়াল বা ভ‍্যাকসিনের প্রয়োগের ফলে যদি কারোর কোনও মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় বা জীবনহানির ঘটনা ঘটে তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব ও ক্ষতিপূরণ সরকারকেই দিতে হবে।"