সন্দীপ সরকার, কলকাতা: কথায় আছে সৃষ্টিতেই স্রষ্টার পরিচয়। হাসপাতালের বেডে বসে আরও একবার তা প্রমাণ করলেন পদ্মশ্রী প্রাপ্ত শিশু সাহিত্যিক নারায়ণ দেবনাথ। তাঁর সৃষ্টি করা যে চরিত্র আপামর বাঙালির হৃদয়ে তাঁকে চিরকালের জন্য অমর করে রেখেছে, সেই বিখ্যাত বাটুলের ছবি এঁকে নারায়ণ দেবনাথ প্রমাণ করলেন, তাঁর 'দ্য গ্রেট' মস্তিষ্ককে এখনও জরা গ্রাস করতে পারেনি।


বয়স একশোর দোরগোড়ায়। শরীরে বাসা বেধেছে নানান অসুখ। রেচনতন্ত্রের সমস্যা নিয়ে গত ২৯ জানুয়ারি মিন্টো পার্কের বেলভিউ নার্সিংহোমে ভর্তি হন নারায়ণ দেবনাথ। সঙ্গে ছিল কিছুটা অসংলগ্নতা। কমে গিয়েছিল সোডিয়াম পটাশিয়ামের মাত্রা। সেই থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। তাঁর চিকিৎসার জন্য তৈরি করা হয় মেডিকেল বোর্ড। বছর ছয়েক আগে পেসমেকার বসেছে। ফুসফুসের কার্যক্ষমতাও আগের মতো আর নেই। ফলে যেকোনও ধরণের সংক্রমণে তিনি আরও কাবু হয়ে যাবেন, এটা ভেবে চিকিৎসকেরা নারায়ণ দেবনাথকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে না রেখে সাধারণ একটি কেবিনে রাখার সিদ্ধান্ত নেন।



রেচনতন্ত্রের সমস্যা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। এই মুহূর্তে শিশু সাহিত্যিক নারায়ণ দেবনাথের বয়স ৯৭। তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছেন ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ সমরজিৎ নস্কর। চিকিৎসকদের মতে, 'এই বয়সে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে আসা, ভুলে যাওয়া সাধারণ ঘটনা।' বাড়িতে পাঠানোর আগে তাঁর মস্তিষ্কের অবস্থা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। ঠিক হয় 'হায়ার ফাংশন টেস্ট' করা হবে। নারায়ণ দেবনাথকে কাগজ-কলম দেওয়া হয়। বলা হয়, তাঁর সৃষ্টি করা যেকোনও একটি চরিত্রের ছবি আঁকতে। কাগজ-কলম পেয়ে আর দেরি করেননি শিশু সাহিত্যিক নারায়ণবাবু। ১০ মিনিটের মধ্যে এঁকে ফেলেন হাসি হাসি মুখ ‘বাটুল দি গ্রেট’ -এর ছবি। গোটা ঘটনার সাক্ষী থাকেন একদল চিকিৎসক। হাসি ফোটে পরিবারের সদস্যদের মুখেও।



'অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থাকলেও, জরা গ্রাস করতে পারেনি নারায়ণবাবুর মস্তিষ্ককে'- রীতিমতো উচ্ছ্বসিত চিকিৎসকেরা। চিকিৎসক সমরজিৎ নস্কর জানান, 'পরীক্ষায় একশোতে একশো পেয়েছেন রোগী।' হাতে আঁকা ছবিটি চিকিৎসক সমরজিৎ নস্করের মেয়েকে উপহার দিয়েছেন তিনি। ছবিটিতে চিকিৎসকের মেয়ের নাম লিখে দেন নারায়ণ দেবনাথ। দিন দু’য়েকের মধ্যেই তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।