কলকাতা: কসবায় মহিলা অফিসার খুনের কিনারা করল পুলিশ। গ্রেফতার সাফাইকর্মী শম্ভু কয়াল। বচসার সময় দেওয়ালে শীলা চৌধুরীর মাথা ঠুকে দেয় শম্ভু। পরে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শীলা চৌধুরীকে খুন করে শম্ভু।
পুলিশ জানতে পেরেছে, শীলা চৌধুরীর বাড়িতে সাফাইকর্মীর কাজ করত শম্ভু। শম্ভুর সঙ্গে শীলার ‘বিশেষ সম্পর্ক’ তৈরি হয়। শীলা চৌধুরীকে ২৭ হাজার টাকা ধার দেয় শম্ভু। পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন শীলা চৌধুরী। একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল মহিলা অফিসারের। পরিচিত এক আত্মীয়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ধার দেয় শম্ভু। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় শম্ভু জানিয়েছে, তার কাছ থেকে মাঝেমধ্যেই টাকা ধার নিতেন শীলা চৌধুরী।
পুলিশ সূত্রে খবর, স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট আনার কথা ছিল শম্ভু। রেজাল্ট না এনে দিনভর শীলা চৌধুরীর বাড়িতেই ছিল শম্ভু। শম্ভু ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই ম্যাসাজের ফিরিস্তি দেন শীলা। শীলার কথায় কান না দিয়ে টাকা চায় শম্ভু।
এরপরেই দুজনের মধ্যে শুরু হয় বচসা। দেওয়ালে শীলার মাথা তিনবার ঠুকে দেয় শম্ভু। এরপর ঘর থেকে বালিশ এনে শীলার মুখে চেপে ধরে শম্ভু। শীলাকে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করে শম্ভু।
এরপর, মহিলার আলমারি থেকে ৭০০০ টাকা নেয় শম্ভু। টাকা নিলেও নেয়নি মহিলার গয়না। নিজের এক আত্মীয়ের কাছে সেই টাকা রেখেছিল শম্ভু। সেই আত্মীয়ের খোঁজে শম্ভুকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।


কসবার টেগোর পার্কের এক আবাসনের তিন তলার ফ্ল্যাটে থাকতেন শীলা চৌধুরী। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনস্থ ন্যাশনায় অ্যাটলাস অ্যান্ড থেম্যাটিক ম্যাপিং অর্গানাইজেশনের আধিকারিক ছিলেন বছর বাহান্নর এই মহিলা। কয়েক বছর আগে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়। একমাত্র ছেলে ক্যালিফোর্নিয়ায় পড়াশোনা করেন। তাই ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন তিনি।



এদিকে, শীলা চৌধুরীর মৃতদেহ ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন টানাপোড়েন!! জানা গেছে, শীলা চৌধুরীর স্বামী বিশ্বজিৎ, সোনারপুরে, স্বাস্থ্য দফতরে কর্মরত ছিলেন। তাঁদের ছেলে সায়ন ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ই, চলে যান ক্যালিফোর্নিয়ায় পিসির কাছে। পরে ভিআরএস নেন বিশ্বজিৎ চৌধুরী।
২০১৪-তে শীলা চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর ডিভোর্স হয়। তিনিও চলে যান ক্যালিফোর্নিয়ায়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
মৃতের ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, দিনে দিনে ছেলে সায়নের সঙ্গে সম্পর্কের আরও অবনতি হয় মা শীলা চৌধুরীর। কলকাতার আত্মীয়দের সঙ্গেও সায়নের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফোন নম্বর না থাকায়, ছেলে সায়নকে, ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে মায়ের মৃত্যুর খবর দিয়েছিলেন আত্মীয়রা। কিন্তু, সায়ন জানিয়ে দিয়েছেন, এই মুহূর্তে দেশে ফেরা সম্ভব নয়।
এই প্রেক্ষাপটে শীলা চৌধুরীর মৃতদেহ কার হাতে তুলে দেওয়া হবে, তা নিয়ে ধন্দ ছড়িয়েছে। মৃতের কলকাতানিবাসী আত্মীয়রা এ বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে কথাও বলছেন। এদিকে, মৃতার মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে দেখা গেছে, মৃত্যুর আগে এক ব্যক্তির সঙ্গে ভিডিও চ্যাট করেছিলেন শীলা চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। এছাড়াও আরেকটি ফোন নম্বরে কথা বলেছিলেন শীলা চৌধুরী। সেই ব্যক্তিকেও খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।