কলকাতা: সিআইডি-র নজরে প্রাক্তন আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষের ঘনিষ্ঠরা। বিভিন্ন জায়গায় চলছে তল্লাশি অভিযান। গ্রেফতার তাঁর ফ্ল্যাটের কেয়ারটেকার রামমঙ্গল সিংহ। পাল্টা সিবিআই তদন্তের দাবিতে আদালতে ভারতীর স্বামী।
একসময় যে পুলিশ কর্তার বিরুদ্ধে তৃণমূল ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ উঠত, তিনিই প্রাক্তন পুলিশ কর্তা হওয়া মাত্র, তাঁর একের পর এক ঘনিষ্ঠদের বাড়িতে সিআইডি তল্লাশি! এরইমধ্যে সোমবার ৬/১ শরৎ চ্যাটার্জি অ্যাভিনিউয়ে এই বাড়িতে একাধিক জায়গায় নোটিস লাগিয়ে আসে সিআইডি।
সিআইডি-র নোটিসে বলা হয়েছে, দাসপুর থানার দায়ের হওয়া একটি অভিযোগের ভিত্তিতে এই বাড়ির মালিক ও ভাড়াটেদের মঙ্গলবারের মধ্যে ভবানীভবনে গিয়ে সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে দেখা করতে হবে।
যে বাড়িতে সিআইডি নোটিস দিয়েছে, তা ভারতী ঘোষের পৈতৃক সম্পত্তি বলে দাবি তাঁর আইনজীবীর। ভারতী ঘোষের একটি ফ্ল্যাটের কেয়ারটেকার রামমঙ্গল সিংহকে গ্রেফতারও করেছে সিআইডি।
কিন্তু, কোন অভিযোগের ভিত্তিতে এই তল্লাশি অভিযান, গ্রেফতার? ঘটনার সূত্রপাত, ২০১৬ সালে। ঘাটালের সোনা ব্যবসায়ী চন্দন মাঝির অভিযোগ, নোট বাতিলের সময় দাসপুর থানার ওসি প্রদীপ রথ সহ চারজন তাঁর কাছ থেকে সোনা কিনতে চান। বাতিল পাঁচশো ও হাজারের নোট নিয়ে সোনা বিক্রি করলে, নতুন নোটে দ্বিগুণ টাকার টোপ দেওয়া হয়।
চন্দন মাঝির দাবি, এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কয়েকদিন পর তাঁর কাছে আসেন দাসপুর থানার এক কনস্টেবল, পুলিশের এক গাড়ির চালক এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী বিমল ঘোড়াই। মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে, কোনও টাকা না দিয়েই তাঁরা ৩৭৫ গ্রাম সোনা নিয়ে নেন।
ব্যবসায়ীর আরও দাবি, দাসপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে তা নেওয়া হয়নি। পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেও লাভ হয়নি। গত বৃহস্পতিবার ঘাটাল আদালতে মামলা করেন চন্দন মাঝি। সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।
সেদিন রাত থেকেই বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়ে যায় অভিযান। চক চাঁইপাট থেকে গ্রেফতার করা হয় ব্যবসায়ী বিমল ঘোড়াইকে। দাসপুর থানার তৎকালীন তথা বেলদা থানার বর্তমান ওসি প্রদীপ রথের বাড়িতে তল্লাশি চালায় সিআইডি।
৭৫ জনেরও বেশি সিআইডি আধিকারিক একাধিক দলে ভাগ হয়ে বৃহস্পতিবার রাত থেকে তল্লাশি শুরু করেন বিভিন্ন জেলায়। ভারতীর আত্মীয়ের বাড়ি সহ তল্লাশি হয় ৪ জেলার ১২ জায়গায়।
সিআআডি সূত্রে দাবি, প্রদীপ রথের বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত হয় সোনা ও নগদ টাকা। সূত্রের খবর, বিভিন্ন জায়গায় চালানো তল্লাশিতে উদ্ধার হয়েছে, ৬০ লক্ষ টাকা, ২ কেজি সোনা এবং প্রচুর জমির নথি।
ভারতী ঘোষের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বেলদা থানার এই ওসি সহ তিনজনকে ক্লোজ করা হয়। এছাড়া তল্লাশি চালানো হয় মহিষাদলের সিআই শুভঙ্কর মণ্ডল, কেশিয়াড়ি থানার এসআই চিত্ত পালের রামপুরহাটের বাড়িতে।
ঘনিষ্ঠ মহলে ভারতী ঘোষ জানিয়েছেন, তিনি রাজ্যের বাইরে রয়েছেন। রাজ্যে ফিরে আইনি পদক্ষেপ নেবেন। ভারতী ঘোষের স্বামী এম ভি রাজু সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। পুলিশের বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তার অভিযোগ তুলে সিবিআই তদন্ত দাবি করেন তিনি।
সিআইডির বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তার অভিযোগ জানাতে এদিন নেতাজি নগর থানায় যান সদ্য প্রাক্তন আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষের স্বামী। আগামী সপ্তাহে হাইকোর্টে ভারতীর স্বামীর দায়ের করা মামলার শুনানির সম্ভাবনা।