কলকাতা: চৈত্র, বৈশাখে এমনিতেই কাজ কম থাকে। তার ওপর এবার করোনা এসে সেই রুটিরুজিটাও কেড়ে নিয়েছে। কাজ না থাকায় টাকা দিতে পারছেন না মালিকরাও। এই অবস্থায় প্রায় না খেতে পেয়ে মরতে বসার মতো অবস্থা কুমোরটুলির পরিযায়ী শ্রমিকদের। পেশায় মৃৎশিল্পী হলেও কলকাতার পটুয়াপাড়ায় রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে অন্তত ১২০০ থেকে ১৩০০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এঁরা প্রত্যেকেই অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক। কুমোরটুলির কোনও কোনও ঘর আছে, যারা বারো মাসই তাঁদের কাজ দেয়। তবে বেশির ভাগই কাজ পায় মরশুম অনুযায়ী। আষাঢ়, শ্রাবণ থেকেই কাজ আসতে শুরু করে। পারিশ্রমিকও কিছুটা বাড়ে। তবে এবার সবটাই কার্যত অন্ধকারে।


উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং নদিয়ার বেশিরভাগ শিল্পীই বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। কেউ হেঁটে, কেউ নিজের পয়সায় গাড়ি ভাড়া করে আবার কেউ গিয়েছেন মোটরসাইকেলে। কবে ফিরবেন কুমোরটুলিতে? বা আদৌ ফিরতে পারবেন কিনা, জানা নেই। কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী কারিগর সমিতির সম্পাদক অখিল কুমার এবিপি আনন্দকে জানালেন তাঁদের অসহায় দিনযাপনের কথা।


ফোনে মৃৎশিল্পী বলেন, “লকডাউনে কাজ নেই। আর কাজ না করলে পয়সাও নেই। রেশনের যে চালডাল সরকার দিচ্ছে, তা আমরা পাচ্ছি না। সেগুলো খেয়ে নিচ্ছে বড় বড় সব  ইঁদুর।” তিনি আরও বলেন, “রাজ্যের সব জেলা থেকেই কমবেশি শ্রমিক কুমোরটুলিতে কাজ করতে আসেন। প্রতিবছর নিদেন পক্ষে ২৫ থেকে ৩০টা ঠাকুর বিদেশে যায়। সেগুলো আমরা বানিয়ে দিতাম। এবার করোনা এসে আমাদের পেটে লাথি মেরেছে। মালিকের কাছে কাজ না থাকলে তাঁরাও বা কোথা থেকে পয়সা দেবে।”


সরকারি কোনও সহায়তা পেয়েছেন?  এই প্রশ্নে অখিলবাবুর জবাব, “আমরা যে শিল্পী, তার কোনও স্বীকৃতিই আমাদের দেওয়া হয়নি। শারদোৎসবে কোটি কোটি মানুষ যুক্ত থাকে। তাঁদের অন্ন সংস্থান হয়। পুজো না হলে শুধু আমরাই নই, হিন্দু-মুসলমান সবাইয়েরই বিপদ হবে।” এবিপি আনন্দের মাধ্যমে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের কাছে তাঁর অনুরোধ, “এই সময়ে আমাদের সহায়তা করুন, বাঁচান। আমরা না বাঁচলে শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।”