কলকাতা: শ্রমজীবী মানুষের শ্রমজীবী ক্যান্টিন। আজ ১৭৭ দিন, ক্যান্টিন চলছে এবং আগামীতেও চলবে। চলবে কারণ, এই ক্যান্টিনের চালানোর নেপথ্যে থাকা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি। কম টাকায় ভাল এবং পুষ্টিকর খাবার। দিনে গড়ে ৬০০ থেকে ৬৫০ শ্রমজীবী মানুষ এই ক্যান্টিনের খাবার খান। লকডাউনের প্রথম পর্ব থেকে আজ পর্যন্ত, ৬ মাস একই রকম ভাবে ক্যান্টিন চালিয়ে যাচ্ছে সিপিআইএম।
কীভাবে সম্ভব হচ্ছে? কোথা থেকে আসছে টাকা? সিপিআইএম কলকাতা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুদীপ সেনগুপ্তর কথায়, “প্রথমে পার্টির ছেলেরাই নিজের পকেটের পয়সা দিয়ে ক্যান্টিন শুরু করে। তখন অনেকই বলেছিল, দশ দিনেই বন্ধ হয়ে যাবে। তবে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাহায্যে ছয় মাস ধরে ক্যান্টিন চলছে।”
‘যৌথ রান্নাঘর’ – এই মডেলেই চলছে যাদবপুরের শ্রমজীবী ক্যান্টিন। লকডাউনে বিজয়গড়, বাপুজি নগর, শ্রী কলোনি, নাকতলা অরবিন্দ নগর, এই চার জায়গায় রান্নাঘর চালিয়েছে সিপিআইএম। এমনও হয়েছে, দিনে ১২০০ মানুষ এই রান্নাঘরের রান্না করা খাবার খেয়েছেন। এখন পাঁচশোর ওপর মানুষ রোজ ক্যান্টিনের খাবার পান।
যাদবপুরের শ্রমজীবী ক্যান্টিনে শ্যামল চক্রবর্তী স্মরণ, উপস্থিত ঊষসী চক্রবর্তী
ক্যান্টিন চালাতে প্রতিদিন কম করে ৩০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। কখনও তারও বেশি। ‘সর্বহারার পার্টি’ সিপিআইএম-কে এই অর্থ জোগাচ্ছে কে বা কারা? প্রশ্নের উত্তরে সুদীপ সেনগুপ্ত জানালেন, “সাধারণ মানুষের সহযোগিতাতেই ক্যান্টিন চলছে। ফান্ড কালেকশন সহ চেনা-পরিচিত, বন্ধু-বান্ধব, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এবং যাদবপুর, টালিগঞ্জের মানুষ অর্থ দিয়ে সাহায্য করছেন। অনেকেই রয়েছেন, যারা দেশের বাইরে আছেন, রাজ্যের বাইরে আছেন তাঁরা টাকা পাঠাচ্ছেন। তাছাড়াও অনেক মানুষই চাল, ডাল দিয়ে সাহায্য করছেন।” শুধু তাই নয়, করোনার কারণে সামাজিক অনুষ্ঠান পালনে যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে, তার মুশকিল আসান করেছে এই ক্যান্টিন। জন্মদিন পালন, বিবাহবার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকীর মতো অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছে সিপিআইএম-এর শ্রমজীবী ক্যান্টিনে। ‘উৎসব’-এর মধ্যেই চলছে অভুক্তের পেটে খাবার জোগানোর মহৎ কাজ।
সিপিআইএম-এর শ্রমজীবী ক্যান্টিনে শ্রমজীবী মানুষের জন্য অন্নসংস্থান
সিপিআইএম-এর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে আর্থিক সাহায্য করেছেন সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়ায় থাকা প্রবাসীরাও। তবে সেই ‘ফান্ড’ না আসলেও ক্যান্টিন বন্ধ হবে না। অনেকের খাবার একসঙ্গে রাঁধলে খরচ কম হয়, এবং কমিউনিটি চললে অনেক মানুষকে একসঙ্গে খাবার পৌঁছেও দেয়া যায় – এই মডেলের সাফল্য এবং বৈজ্ঞানিক ভিত্তিই ক্যান্টিনকে বাঁচিয়ে রাখবে, আশাবাদী সিপিআইএম নেতা।
একই সঙ্গে সুদীপ সেনগুপ্ত এবিপি আনন্দকে বলেন, এই ক্যান্টিন থেকে কেবল শ্রমজীবী মানুষের অন্নসংস্থানই হচ্ছে না, কর্মসংস্থানের পথও খুলেছে। ৫ জন স্থায়ী রাঁধুনী এবং খাবার প্যাকেজিংয়ের জন্য আরও অন্তত ৫ জন রয়েছেন, যাদের রোজের পারিশ্রমিক দেয় পার্টি। আর ৩ দিন পর ১৮০ দিন হবে ক্যান্টিননের। আর সপ্তাহ তিন পর হবে ২০০ দিনের রেকর্ড। একশো এবং দেড়শো তম দিনের মতো ওই দিনও বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হবে। উপস্থিত থাকবেন সমাজের বিশিষ্টজনেরা।