কলকাতা: প্রকাশ্যে কংগ্রেসের হাত ধরছে না বামেরা। বিধানসভার ভিতরেও জোটে ফাটলের ছবি।
বুধবার, বিধানসভায় তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়ের ঝাঁঝালো আক্রমণের প্রতিবাদে মনোজ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে কংগ্রেস এবং সুজন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বামেরা ওয়াক আউট করে। কংগ্রেসের ওয়াক আউটের সময় বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বিধানসভায় ছিলেন না। তিনি পরে বিধানসভায় এসে কংগ্রেসের ঘরে ঢুকে জানতে চান, কেন ওয়াক আউট করেছেন?
এরপরই কংগ্রেস বিধায়কদের নিয়ে তিনি সভাকক্ষে ঢোকেন। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এর থেকেই জোটের ফাটল স্পষ্ট। বিরোধী দলনেতার অবশ্য দাবি, আমরা তাৎক্ষণিক ওয়াক আউট করেছিলাম। প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে। আমাদের দলের নতুন নতুন বক্তাদের বলার সুযোগ করে দিতেই ফের বিধানসভায় ঢুকেছি।
কিন্তু, এতে কি কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের কক্ষ সমন্বয় জোর ধাক্কা খেল না? বাম পরিষদীয় দলনেতা ভাঙলেন তবু মচকালেন না! সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ওরা আলাদা দল। আমরা আলাদা দল। আলাদা আন্দোলনও হবে। ফ্লোর কোঅর্ডিনেশনও হবে।
এরই মাঝে, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতিকেও এদিন জোটের বিরুদ্ধে হাতিয়ার করল তৃণমূল। শাসক দলের বিধায়ক সমীর চক্রবর্তী সভাকক্ষে কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতি তুলে ধরে দাবি করতে থাকেন, এই মতকে মান্যতা দিলে ২৬ জন সিপিএম বিধায়কগের পদত্যাগ করা উচিত। না হলে এই বিবৃতি হাস্যকর। তৃণমূল বিধায়কের বক্তব্যের মাঝে অবশ্য তাঁর মাইক বন্ধ করে দেন স্পিকার।


এ দিন যাবতীয় ঘটনার সূত্রপাত তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়ের বক্তব্য ঘিরে। এ দিন তিনি জোরালভাবে সিপিএম ও বামেদের আক্রমণ করেন। তাঁর দাবি, গণতন্ত্রের কথা সিপিএমের মুখে মানায় না। সিপিএম আমলে বাহান্ন হাজার রাজনৈতিক খুন হয়েছে। তেত্রিশ হাজার সংখ্যালঘু খুন হয়েছে।
কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের জোট করা নিয়েও সিপিএমেকে চূড়ান্ত নীতিহীন ও  আদর্শহীন দল হিসেবেআক্রমণ করেন তৃণমূল বিধায়ক। তাপস রায় বলেন, সিপিএম নির্লজ্জ, বেহায়া। আদর্শ ভোগে গেছে। শুধু নেতা-মন্ত্রী হওয়ার জন্য আপনারা এখন দল করেন। এই সময় স্পিকারের চেয়ারে ছিলেন তৃণমূল বিধায়ক পরশ দত্ত। নির্লজ্জ ও বেহায়া শব্দদুটিকে বিধানসভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
এদিকে, সিপিএম বিধায়করাও প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। কিন্তু, তাপস রায় থামেননি। সিপিএমকে তীব্র আক্রমণের পর তিনি নিশানা করেন কংগ্রেসকে। অধীর চৌধুরীর নাম উল্লেখ করে বলেন, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বামকরণ হতে বারণ করেছেন। তখনই কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র অভিযোগ করেন, যিনি বিধানসভার সদস্য নন, তাঁর নামে কিছু বলা যাবে না। এই বলে মনোজ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে কংগ্রেস এবং সুজন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বামেরা একযোগে ওয়াক আউট করে।
কিন্তু, তারপর আব্দুল মান্নান, কংগ্রেস বিধায়কদের নিয়ে ফের বিধানসভায় ঢোকেন। এদিকে, তাপস রায় অসংসদীয় শব্দ ব্যবহার করেছেন, এই অভিযোগে অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করেন সিপিএম বিধায়করা। পরে সভাকক্ষে দাঁড়িয়ে তাপস রায় দাবি করেন, তিনি কোনও অসংসদীয় শব্দ ব্যবহার করেননি। অধ্যক্ষ তখন বলেন, তিনি বিষয়টি দেখবেন।