কলকাতা: করোনা সঙ্কটকালে দুর্গাপুজো নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রায় ঘিরেই এখন জোর শোরগোল।বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও অরিজিৎ‍ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঞ্চ তার নির্দেশে বলেছে,প্রতিটি পুজো মণ্ডপ ‘নো এন্ট্রি’ জোন হিসেবে গণ্য হবে।পুজো প্যান্ডেলের মধ্যে ঢুকতে পারবেন না দর্শনার্থীরা।ছোট ও বড় পুজোর ক্ষেত্রে ৫ ও ১০ মিটারের দূরত্বে ব্যারিকেড দিতে হবে।এই নির্দেশ মানতে হবে রাজ্যের প্রত্যেকটি পুজো কমিটিকে।


তৃতীয়ার দুপুরে হাইকোর্টের এই রায় আসার পরই বহু ক্লাব ও পুজো কমিটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। যেমন, দক্ষিণ কলকাতার মুদিয়ালি ক্লাব। করোনা আবহে মণ্ডপে সতর্কতা নিয়ে তারা আগে থেকেই প্রচার চালাচ্ছিল। এদিন হাইকোর্টের রায় আসার পরই মুদিয়ালি ক্লাবের পুজো মণ্ডপের সামনে ব্যারিকেড দেওয়ার কাজ শুরু হয়। সেইসঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ও জায়ান্ট স্ক্রিনেরও বন্দোবস্ত থাকছে বলে জানা গিয়েছে।

করোনা আবহে পুজো। তাই আগে থেকেই সচেতনতামূলক প্রচার চালাচ্ছিল সল্টলেক এফডি ব্লক পুজো কমিটি। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পরই মণ্ডপের সামনে বাঁশের ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে। ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘নো এন্ট্রি’ বোর্ড।

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী,পুজো উদ্যোক্তাদের ১৫ থেকে সর্বাধিক ২৫ জনের তালিকা তৈরি করতে হবে। একমাত্র তাঁরাই মণ্ডপের  ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন। সল্টলেক এফডি ব্লকের পুজো উদ্যোক্তারা সেই নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলার পক্ষপাতী।সব মিলিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ পালনে, পুজো উদ্যোক্তারা তৎ‍পর।

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে,বড় মণ্ডপের ক্ষেত্রে মণ্ডপের শেষ প্রান্ত থেকে ১০ মিটার অর্থাৎ ৩০ ফুট জায়গা ব্যারিকেড করে দিতে হবে। ছোট পুজোর ক্ষেত্রে সেটা ৫ মিটার।এই জায়গার বাইরে থেকেই ঠাকুর দেখতে হবে দর্শনার্থীদের। কিন্তু, উত্তর কলকাতায় বেশ কিছু পুজো হয় পাড়ার গলির মধ্যে। সেক্ষেত্রে ব্যারিকেড দিলে কীভাবে দর্শকরা ঠাকুর দেখবেন - এই নিয়ে তৈরি হয়েছে ধন্দ।

ফোরাম ফর দুর্গোৎসব-এর সম্পাদক  শাশ্বত বসু  বলেছেন, এটা আমাদের কাছে একটা ধাক্কা। চার মাস ধরে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য কাজ করেছি। আমরা মাস্ক বাধ্যতামূলক করেছি। প্রবেশ পথ স্যানিটাইজিংয়ের ব্যবস্থা হয়েছে, থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের জন্য মেশিনও কেনা হয়েছে। প্রবেশ পথে চেয়ে বেরোনোর পথ প্রশ্বস্ত রাখা হয়েছে। এখন মণ্ডপ থেকে ১০ মিটার দূরত্বে ব্যারিকেডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেছেন, আমাদের কিছু জিনিস অস্পষ্ট, গলির ক্ষেত্রে কীভাবে সম্ভব, কবে থেকে এটা কার্যকর হবে, কী হবে, কীভাবে হবে জানি না, প্রশাসন রায় পড়ে যেভাবে করবে, সেভাবে পালন করব।

উত্তর কলকাতার ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৭টি পুজো কমিটির সঙ্গে যুক্ত কলকাতা পুরসভার বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সদস্য অতীন ঘোষ। মণ্ডপে নো এন্ট্রির নিয়ম মানতে গেলে বেশ কিছু পুজো কমিটি সমস্যায় পড়বে বলে তাঁর ধারণা। তিনি বলেছেন, হাতিবাগান, নলিন সরকার স্ট্রিট - এগুলি গলির মধ্যে হয়, এগুলোর এন্ট্রি একদিক দিয়ে হয়, মণ্ডপের একদিকে ঢুকে আরেক দিকে বেরিয়ে যায়। এবার যদি এটা আটকাতে যাই, তাহলে একদিকে এক্সিট, এন্ট্রি করতে হবে, তাহলে ভিড় হবে। তার চেয়ে বাইরের লোককে আসতে দেওয়া যাবে না, এখন পুজো কমিটির সঙ্গে আলোচনা করব। তবে স্বাস্থ্যের বিষয়টা বললে এই রায় ঠিকই আছে।

কলকাতার ক্রাউড পুলার পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম শ্রীভূমি স্পোর্টিং। প্রতিবার নজরকাড়া থিম উপহার দেয় এই পুজো কমিটি। এবারও শ্রীভূমির পুজো দেখার জন্য দ্বিতীয়া থেকেই দর্শনার্থীদের ভিড়।

এদিন কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, বাজারে যা ভিড়, ৫দিন পুনরাবৃত্তি হতে দেওয়া যায় না। ভার্চুয়ালে পুজোর কভারেজ করা যেতে পারে।

সোমবার যখন তারা এই রায় দিচ্ছে, সেই সময়েও শ্রী-ভূমি স্পোর্টিংয়ের পুজোমণ্ডপে মানুষের ঢল দেখা গেছে।

পুজোর ভিড়ে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা প্রবল। তাই করোনা আবহে দুর্গাপুজো নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট নানা বিধি-নিষেধের মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু, স্থানাভাবে সমস্ত পুজো কমিটি কিভাবে এই নির্দেশ পালন করবে? তারা জন্য কি কি পন্থা নেবে?

দমকলমন্ত্রী ও শ্রীভূমি পুজো উদ্যোক্তা  সুজিত বসু বলেছেন, কোর্টের রায়কে মান্যতা সবাইকে দিতে হবে, সংবিধানকে গুরুত্ব দিতে হবে, এটাও মনে রাখতে হবে যে রায় তার প্রেক্ষিতে আমরা হয়তো ম্যানেজ করে নিতে পারব, কিন্তু অনেক পুজো আছে, তাদের এতো স্পেস নেই ম্যানেজ করতে পারবে না, আমরা আগে রায়ের কপি দেখি। সেই মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


হাইকোর্টের নির্দেশের পর নতুন করে পরিকল্পনা করতে হচ্ছে অন্যান্য পুজো উদ্যোক্তাদেরও।

থিমে অভিনবত্ব আর রাজডাঙা নব উদয় সঙ্ঘ সমার্থক। কসবার এই পুজো মণ্ডপে ঢোকার রাস্তা যথেষ্ট চওড়া। তাই হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে মণ্ডপের সামনে ব্যারিকেড তৈরি করা হলেও ঠাকুর দেখায় সমস্যা হবে না।

কামাখ্যা মন্দিরের আদলে ‘ঘেরা মণ্ডপ’ উল্টোডাঙার কবিরাজ বাগানের পুজোর। হাইকোর্টের নির্দেশের পর এদিন ১০ মিটার দূরত্ব বিধি মেনে ঘিরে দেওয়া হয় মণ্ডপে ঢোকার রাস্তা।

দমদম পার্ক ভারতচক্র এবং তরুণ সঙ্ঘের পুজো একেবারে পিঠোপিঠি। ফলে ১০ মিটার দূরত্বে ব্যারিকেড করাটাই একটা সমস্যার বিষয় বলে মনে করছেন পুজো উদ্যোক্তারা।

হাইকোর্টের নির্দেশ মানা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে দুর্গাপুজোর পর আদালতে হলফনামা দিতে হবে পুলিশকে। তার আগে তৃতীয়ার বিকেল থেকেই শহরের বিভিন্ন পুজো মণ্ডপ ঘুরে দেখে পুলিশ।

একডালিয়া এভারগ্রিন পুজোর উদ্যোক্তা তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, এই রায় আগে এলে ভালো হত। হাইকোর্ট বলেছে মানতে হবে সবাইকে, তবে সরকার যা বলবে তাই হবে।



একডালিয়া এভারগ্রিনের সুদৃশ্য ঝাড়বাতির সৌন্দর্য্য এবার চাক্ষুস করা হবে না অনেকেরই! কারণ,করোনা সংক্রমণের আবহে এবার পুজো মণ্ডপে দর্শকের নো এন্ট্রি। নিউ নর্মালে, দুর্গাপুজো এভাবেই সম্পন্ন করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। তৃতীয়ার দুপুরে এই রায় আসার পর নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে শহরের বড় পুজো কমিটিগুলি। পরিকল্পনায় বড় রদবদল করতে হচ্ছে।

শহরের অন্যতম বড় পুজো নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ। যা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পুজো বলে পরিচিত। ক্লাবের সামনে মাঠ। সেখানেই সুদৃশ্য মণ্ডপ। ফলে ১০ মিটার জায়গা ব্যারিকেড করে দিলেও দর্শকদের প্রতিমা দর্শনে কোনও সমস্যা হবে না বলে উদ্যোক্তারা আশাবাদী।

দক্ষিণ কলকাতার নজরকাড়া পুজো সুরুচি সঙ্ঘ। যা আবার রাজ্যের আরেক হেভিওয়েট মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের পুজো বলে পরিচিত। সেখানে ইতিমধ্যেই দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেছেন। কিন্তু, হাইকোর্টের নির্দেশের পর ১০ মিটার দূরত্বে ব্যারিকেড করা নিয়েই উদ্যোক্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।