কলকাতা: পূর্ণেন্দু বসু, সব্যসাচী দত্ত থেকে বৈশালি ডালমিয়া। ভোটের দিন তৃণমূলের তিন প্রার্থীর কেউ আঙুল উঁচিয়ে শাসালেন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। কেউ পুলিশকে। কেউ আবার চোটপাট করলেন সিপিএমের নির্বাচনী এজেন্টের ওপর।


তৃণমূলের তিন মূর্তি। শাসন-শাসানি থেকে হুমকি-চোখ রাঙানি। ভোট-পুজোর তিন পুরোহিত...

প্রথমেই অনেকের আদরের জ্যেঠু। কেন্দ্রীয় বাহিনী কড়া ভূমিকা দেখেই বেজায় খাপ্পা রাজারহাট গোপালপুরের তৃণমূল প্রার্থী পূর্ণেন্দু বসু। যেখানেই গেলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কার্যত চোখ রাঙালেন। নিজের মর্জিমতো কাজ হচ্ছে না দেখে আঙুল উঁচিয়ে শাসিয়েও দিলেন।

রাজারহাট গোপালপুরের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী পূর্ণেন্দু বসু কেন্দ্রীয় বাহিনীকে শাসিয়ে বললেন, বিহেভ ইওরসেলফ। ভিতরের কাজ দেখার রাইট আপনার নেই। আপনার কাছে লিখিত অর্ডার আছে? বাইরে যান।

যা দেখে বিরোধীদের কটাক্ষ, নিজের কায়দায় ভোট করাতে না পেরে জ্যেঠু জ্যাঠামশাইগিরি করলেন দিনভর। কেন্দ্রীয় বাহিনী কথা শুনছে না দেখে, এক্কেবারে ফিল্মি কায়দায় হুমকি দিতেও ছাড়লেন না।

তিনি বলেন, ‘আমি বলে দিচ্ছি, ওকে এখান থেকে সরিয়ে দিন। আপনি চেঞ্জ করে দিন। এধরনের অডার্সিটি যেন না দেখায়। তাহলে ও যেখানে আছে, কোথায় যাবে ও জানে না’

কিন্তু, কেন্দ্রীয় বাহিনী তো হুমকি কানেই তোলে না!
পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে একজন এগিয়ে এলেন পূর্ণেন্দু বসুর উপকার করতে! কেন্দ্রীয় বাহিনীর কানে কানে বোঝানোর চেষ্টা করলেন পূর্ণেন্দু বসুর কী অপরিসীম গুরুত্ব!
আর বাইরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওপর একপ্রস্থ চোটপাট করেই বুথের ভিতরে ঢুকে পড়লেন পূর্ণেন্দু....সঙ্গে সাঙ্গপাঙ্গ...

আর বুথের ভিতরে তো তখন ম্যাজিক! পূর্ণেন্দু দাঁড়িয়ে কথা বলছেন, আর সেই ফাঁকে এক যুবক টপাটপ ছাপ্পা দিয়ে চলেছেন! যেন ভোট বিলোচ্ছেন....সবাই দেখেও দেখছে না....

বিরোধীদের দাবি, পূর্ণেন্দু যা করতে গিয়েছিলেন, করে ফেলেছেন! বাহিনীকে চমকে নিজের বাহিনীকে দিয়ে কাজ হাসিল করেছেন।
এবিপি আনন্দর পর্দায় এই ছবি দেখে অবশ্য নড়েচড়ে বসেছে নির্বাচন কমিশন। স্বতঃপ্রণোদিতভাবেই জেলাশাসকের কাছে তারা জানতে চেয়েছে, এই ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই কেন্দ্রে ভোট বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিজেপি।
যদিও, এসবকে গুরুত্ব দিতে নারাজ পূর্ণেন্দু! তাঁর গলায় শাসকের দম্ভ। তাঁর দাবি, ‘আমরা গোলমাল করছি না, তাই শান্তিপূর্ণ হচ্ছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী সন্ত্রাস করছে’।

পূর্ণেন্দু যদি জ্যেঠু হন, তাহলে সব্যসাচী দত্ত তো সিন্ডিকেটের দাদা! কটাক্ষের সুরে বলে থাকে বিরোধীরা। আর সেই সব্যসাচীকেও বেজায় চটতে দেখা গেল রাজ্য পুলিশের এক অফিসারের উপর! ওই পুলিশ অফিসারের অপরাধ শুধু এইটুকুই যে, তাঁরা বুথের সামনে থেকে তৃণমূলের জমায়েত সরাতে গিয়েছিলেন!

পোড় খাওয়া পূর্ণেন্দু বা সব্যসাচীর চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন না রাজনীতিতে নবাগত বালির তৃণমূল প্রার্থী বৈশালী ডালমিয়াও। বয়জ্যেষ্ঠরা কেন্দ্রীয় বাহিনী-পুলিশকে শাসন করে ক্ষমতা জাহির করলেন, আর বৈশালীর বিক্রমের সাক্ষী থাকলেন সিপিএমের নির্বাচনী এজেন্ট কণিকা গঙ্গোপাধ্যায়।

সিপিএম নেত্রী কণিকা দলের জোনাল অফিসে গিয়ে ঢুকলে, পিছু ধাওয়া করে বাইরে গাড়ি নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলেন বৈশালী। এই ঘটনা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে সিপিএম। পাল্টা বেলুড় থানায় সিপিএম নেত্রী কণিকা গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছেন তৃণমূল প্রার্থী।