কলকাতা:বাইপাসের ধারে জুতোর কারখানায় বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড। আর এই অগ্নিকাণ্ডের ছবি লুকোতে লঙ্কাকাণ্ড। এবিপি আনন্দর প্রতিনিধিদের দফায় দফায় বাধা, মারধর, হেনস্থা, হুমকি।
স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার সকাল পৌনে দশটা নাগাদ বাইপাসের ধারে চৌবাগায় গুলশন কলোনিতে এই জুতোর কারখানা আগুন লাগে। এই ভয়াবহ আগুনের ছবি তুলতে গিয়েই দফায় দফায় আক্রান্ত হলেন এবিপি আনন্দর সাংবাদিকরা। হিন্দোল দের সঙ্গে ছিলেন চিত্র সাংবাদিক কিশোর মালাকার। প্রথমে তাঁদের লক্ষ্য করে ঢিল ছোঁড়া হয়। কেড়ে নেওয়া হয় ক্যামেরা। হুমকি দিয়ে বলা হয় ক্যামেরা থেকে ছবি মুছে ফেলতে।
অন্য দিক থেকে আগুনের ছবি তুলতে গিয়ে, কারখানার কর্মী ও স্থানীয়দের একাংশের হাতে একই ভাবে আক্রান্ত হন এবিপি আনন্দর অরিত্রিক ভট্টাচার্য ও চিত্র সাংবাদিক সন্দীপন গুপ্ত। তাঁরা পাশের নির্মীয়মাণ একটি বাড়ির ছাদ থেকে দেখাচ্ছিলেন আগুন কতটা ভয়াবহ। কিন্তু, পাড়ার দাদাদের তা সহ্য হয়নি। সাত-আটজন মিলে ছাদে উঠে শুরু করে দেয় আগুনে হুমকি, ছবি তুললে ক্যামেরা ভেঙে দেব। ছাদ থেকে ফেলে দেব।
ছিনতাই করে নেওয়া হয় সরাসরি সম্প্রচারের যন্ত্রটিও। এরপর নিচে নেমে ছবি তুলতে গেলে আনন্দপুর থানার পুলিশের সামনেই ৩০-৪০ জন মিলে ঘিরে ধরে এবিপি আনন্দর প্রতিনিধিদের। এবার আর হুমকি নয়, একেবারে মারধর। শুরু হয়ে যায় চড়-ঘুষি।
এরপর দূরের একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির ছাদ থেকে ছবি তুলতে গেলে সেখানেও ধাওয়া করে এলাকার দাদারা। সঙ্গে থাকা প্রতীক রায়ের কাছ থেকে ক্যামেরা ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়। তারপর একেবারে খুনের হুমকি।
কিন্তু, আগুনের ছবি দেখানোয় এত আপত্তি কীসের? অগ্নিকাণ্ড লোকাতে কেন এমন লঙ্কাকাণ্ড? এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, জলা জমি ভরাট করে সব বেআইনি নির্মাণ হয়েছে। বেআইনি কাজ যাতে সামনে না আসে তাই ছবি তুলতে বাধা।
কলকাতা পুরসভা সূত্রেও দাবি, এই জুতোর কারখানাটি পুরোপুরি বেআইনি। কোনও বৈধ কাগজপত্র নেই। আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা তো দূর অস্ত, ট্রেড লাইসেন্সটুকুও নেই। দমকল সূত্রে দাবি, এই এলাকায় এমন বেশ কয়েকটি কারখানা রয়েছে যেখানে নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গুদামে মাল মজুত করা হয়। যেখানে আগুন লেগেছে সেই জুতোর কারখানাটিতে ডিজেলও মজুত করা হয়েছিল বলে সূত্রের দাবি। দমকলের ডিজি বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না,...ল্যাক থাকলে তদন্ত করে দেখছি....ফায়ার লাইসেন্স ছিল কি না চেক করে দেখছি। ফল্ট থাকলে ব্যবস্থা নেব।
এই বেআইনিভাবে চালানো ব্যবসার কথা যাতে সামনে না আসে তাই কি এ ভাবে দফায় দফায় আগুনের ছবি তুলতে বাধা? তাই কি পাড়ার দাদাদের দিয়ে সাংবাদিকদের মারধর, খুনের হুমকি? সাউথ ইস্ট ডিভিশনের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার কল্যাণ মুখোপাধ্যায়কে গোটা ঘটনার কথা জানানো হয়। তিনি আশ্বাস দেন, বিষয়টি দেখার। কিন্তু, তারপরেও দুষ্কৃতীদের আটকানো যায়নি। তাদের দৌরাত্মে শেষমেশ প্রাণ হাতে করে ঘটনাস্থল ছাড়তে হয় এবিপি আনন্দর প্রতিনিধিদের।
আনন্দপুর থানার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।