কলকাতা:  ফ্লোটেলকর্তার গঙ্গায় তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ। ঘটনায় একাধিক বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নিখোঁজের স্ত্রী। ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চললেও, এখনও খোঁজ মেলেনি ফ্লোটেল কর্তার।
শনিবার লঞ্চে করে পিকনিকে গিয়ে গঙ্গায় তলিয়ে যান ফ্লোটেলের একজিকিউটিভ ডিরেক্টর অরিন্দম বসু। তাঁর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে এই ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয়দের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করেছে পশ্চিম বন্দর থানার পুলিশ।
ফ্লোটেলের ভাইস প্রেসিডেন্ট অরিন্দম বসু কীভাবে এতজনের সামনে গঙ্গায় পড়ে তলিয়ে গেলেন, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তাঁর স্ত্রী অদিতি বসু। পুলিশ সূত্রে দাবি, পশ্চিম বন্দর থানায় দায়ের করা অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, এটা কোনও দুর্ঘটনা নয়। এর নেপথ্যে অন্য কারণ থাকতে পারে।
পরিবারের সন্দেহ, প্রথমত, লঞ্চে সাধারণত নিরাপত্তার জন্য একাধিক বন্দোবস্ত থাকে। ফ্লোটেলকর্তার স্ত্রীরও দাবি, অরিন্দম সাঁতার না জানলেও অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন। বলেন, ভেরি কেয়ারফুল পার্সন। কয়েকদিন আগে রায়চক গেছিলাম। তখনও সাবধান ছিল। এরপরও তিনি কী করে জলে তলিয়ে গেলেন, তা ভেবে পাচ্ছে না ফ্লোটেলকর্তার পরিবার।
পরিবারের দ্বিতীয় সন্দেহ, এতজনের সামনে কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটল? স্ত্রীর দাবি, লঞ্চে ৩৩ জন ছিলেন। ওরা অন্ত্যক্ষরী খেলছিল। ফোনে কথা বলতে বলতে যায়। ঝাঁকুনি দেয়। একজন বলে পড়ে গেছেন।
পরিবারের সন্দেহ তৃতীয়ত, তৎক্ষণাৎ উদ্ধারের চেষ্টা নয় কেন? নিখোঁজ ফ্লোটেলকর্তার স্ত্রীর দাবি, জলে পড়ার পরও কয়েকজন সহকর্মী অরিন্দমকে দেখতে পান। বলেন, ওরা হাত দেখতে পেয়েছিল। জুতো দেখতে পেয়েছিল। তাঁর প্রশ্ন, তখনই তাঁর স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা হল না কেন? পরিবারের আরও দাবি, বাড়িতে অনেক পরে খবর দেওয়া হয়। অদিতি বলেন, পৌনে পাঁচটা নাগাদ আমাকে জানায়। দেরিতে খবর পেয়েছি।
পুলিশ সূত্রে দাবি, দুর্ঘটনার সময় লঞ্চে যারা ছিল, প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হয়েছে। এর মধ্যে গঙ্গায় তলিয়ে যাওয়া ফ্লোটেলকর্তার খোঁজে রবিবারও চলছে তল্লাশি।
গঙ্গায় নেমেছে ডুবুরি। তন্নতন্ন করে খোঁজা হয়েছে বিভিন্ন জায়গা। শনিবার লঞ্চে করে হাওড়ার নাজিরগঞ্জে গঙ্গাবক্ষে পিকনিক করতে যান অরিন্দম। পিকনিক চলাকালীন সেখানেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা।
এদিন সকাল থেকে সেখানে মোতায়েন ছিল পুলিশের লঞ্চ। ছিলেন ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের কর্মী ও ডুবুরিরা। সকাল দশটা নাগাদ গঙ্গায় নামেন ডুবুরিরা। দু-আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে তল্লাশি অভিযান। তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখা হয় গঙ্গাবক্ষে বিভিন্ন অংশ। কিন্তু, তারপরও নিখোঁজ ফ্লোটেল কর্তার কোনও হদিশ মেলেনি। পুলিশ সূত্রে দাবি, পিকনিকে অংশগ্রহণকারী, রান্না ও পরিবেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী ও লঞ্চের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
তাঁরা দাবি করেছেন, পিকনিকের সময় সেখানে মদ্যপান চলছিল। কেউ লাইফ জ্যাকেটও পরে ছিলেন না। পুলিশ সবদিকই খতিয়ে দেখছে।