কলকাতা: জি ডি বিড়লাকাণ্ডে অধ্যক্ষার দাবি খারিজ করে তাঁর দিকেই পাল্টা অভিযোগের আঙুল তুলল নির্যাতিত শিশুর পরিবার। মনে আতঙ্ক এমনই থাবা বসিয়েছে, যে মেয়েকে আর ওই স্কুলে পাঠাতেও চান না তাঁরা।
চার বছরের মেয়ে কিছুতেই কোল থেকে নামতে চাইছে না। থেকে থেকে কঁকিয়ে উঠছে। বৃহস্পতিবার স্কুলে গিয়ে যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা এখনও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ওকে। মেয়ের অবস্থা দেখে ভয় যাচ্ছে না মায়েরও। মাঝে মাঝে যন্ত্রণা আরও বেড়ে যাচ্ছে স্কুলের অধ্যক্ষার এই কথাগুলো মনে পড়লে।
গতকাল জিডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশন স্কুলের অধ্যক্ষা শর্মিলা নাথ দাবি করেন, সন্ধ্যে ৬টা পর্যন্ত স্কুলে ভাইস প্রিন্সিপ্যাল-সহ অন্যান্য শিক্ষিকারা ছিলেন। ওই সময় ছাত্রীটির কিছু হয়নি। পাশাপাশি তাঁর আরও দাবি, নির্যাতিতার অভিভাবকরা স্কুলের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি।
শিশুর মায়ের দাবি, অধ্যক্ষার এই কথা সম্পূর্ণ ভুল। তিনি বলেন, স্কুল থেকে বেরনোর সময় মেয়ে কাঁদছিল। বলল টয়লেট পেয়েছে। স্কুলের অধ্যক্ষার বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন শিশুর মা-বাবা। বলেন, ডেফিনিটলি তথ্য গোপন করেছে। ৩ বছর আগের ঘটনাতেও চাপা পড়েছে। একই কথা জানিয়ে শিশুর বাবা বলেন, প্রিন্সিপালের জন্যই এরকম হয়েছে। যত দূর যাওয়ার যাব। পরিবারের আইনজীবী জানিয়েছেন, তাঁরা হাইকোর্টে মামলা করবেন।
জি ডি বিড়লা স্কুলের আরেক শিক্ষক তো আবার এত মারাত্মক ঘটনার পরও দুষ্টুমির তত্ত্ব খাড়া করেছিলেন। এক শিক্ষিকা হাসতে হাসতে বলেন, কেউ যদি দুষ্টুমি করে কী করা যাবে? মেয়ের যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখ দেখে এই কথাগুলো বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে মায়ের। বলেন, স্কুল অস্বীকার করল। হাসির ছলে উড়িয়ে দিল। টিভিতে দেখলাম দুষ্টুমির কথা বলেছে। অবাক হয়ে যাচ্ছি।
যে স্কুলে শিক্ষিকাদের এই মনোভাব, সেখানে আর মেয়েকে পাঠাতেই চাইছেন না মা। বলেন, আমি কী করে স্কুলে পাঠাব? এর থেকে বড় কিছু হবে না, কী গ্যারান্টি? সিসিটিভি স্কুল দেখবে। ওরা কোনও কথা শুনতে চায় না।
জি ডি বিড়লা স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য শুক্রবার বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছে, ৩০ নভেম্বর রাত ১০.৪৫-এ যাদবপুর থানা থেকে স্কুলের অধ্যক্ষার কাছে কাছে একটি ফোন আসে। একজন শিক্ষকের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। যখন অধ্যক্ষা জানতে চান, কেন এধরনের তথ্য চাওয়া হচ্ছে, তখন পুলিশের তরফে জানানো হয়, লোয়ার ইনফ্যান্টের এক পড়ুয়ার পরিবার শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেছে।
এরপর স্কুলের রেকর্ড অনুযায়ী, ওই পড়ুয়ার বাবা-মার ফোন নম্বরে কল করা হয়। কিন্তু, ফোনটি সুইচড-অফ ছিল। তদন্তে পুলিশকে সবরকমের সহযোগিতা করছে স্কুল ম্যানেজমেন্ট এবং ভবিষ্যতেও করা হবে। তদন্ত সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রতিনিধিকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।