কলকাতা: শহরের ফের বেপরোয়া অটো! ফের গতির দৌরাত্ম্যের শিকার এক তরতাজা প্রাণ।
ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল সাড়ে ৬টা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বেলেঘাটা থেকে রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিট ধরে দুরন্ত গতিতে আর জি কর হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিল একটি অটো। সেই সময় অরবিন্দ সরণি হয়ে খন্নার দিকে যাচ্ছিল বারাসত-হাওড়া রুটের একটি বাস।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হাওড়াগামী বাসটি যখন গৌরীবাড়ি মোড় পেরোচ্ছে, তখন সিগন্যাল ভেঙে এগোতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায় অটোটি। সজোরে ধাক্কা মারে বাসের পিছনের দরজার পাশে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, অটোর সামনের সিটে বসেছিলেন জয়পুরিয়া কলেজের ছাত্রী পূজা পাল। পিছনে ছিলেন বাগবাজার স্ট্রিটের বাসিন্দা অজয় ও ইতি সরকার ও আরেক জন ব্যক্তি।
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন পূজা। আহত হন বাকিরাও। স্থানীয় বাসিন্দারা আহতদের আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে পূজাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
পূজার অকাল মৃত্যুতে বেলেঘাটার পূর্বরাগ এলাকায় সকাল থেকে শোকের আবহ। পড়াশোনায় মেধাবি ছিলেন পূজা। অ্যাকাউন্টেসিতে অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন জয়পুরিয়া কলেজে।
ফার্স্ট বেঞ্চে বসলে মন দিয়ে শোনা যায় অধ্যাপকের কথা। তাই সকাল সকাল মাকে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু কলেজে পৌঁছনোর আগেই বাড়িতে পৌঁছল দুঃসংবাদটা!!
প্রতিবেশী কিছু যুবককে নিয়ে থানা-পুলিশ করতে ব্যস্ত পূজার বাবা ঝণ্টু। খবরটা পাওয়ার পর থেকেই অঝোরে কেঁদে চলেছেন মা ঝুম্পা।
গত ৯ সেপ্টেম্বর জন্মদিন ছিল পূজার। বাড়িতে কত ধুমধাম হল। হঠাৎ যেন নিভে গেল সব আলো। আদুরে নাতনির এভাবে চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছেন না ঠাকুমা।
আর কোনও মায়ের কোল যাতে এভাবে খালি না নয়, সে ব্যবস্থা করুক প্রশাসন। এটুকুই চাওয়া পূজার পরিবারের।
উল্টোডাঙা ট্রাফিক গার্ড ও বটতলা থানার পুলিশ জানিয়েছে, অটো চালকের বেপরোয়া মনোভাবের কারণেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। যে দুর্ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছে, সাম্প্রতিক অতীতে কয়েকটি বেপরোয়া অটো দৌরাত্ম্যের কথা।
গত ২৮ মে গড়িয়াহাট আইটিআইয়ের সামনে ফুটপাথে উঠে যাওয়া অটোর ধাক্কায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ২০১৪-র ৫ ডিসেম্বর তারাতলায় সিগন্যাল উপেক্ষা করে ভুল লেনে ঢুকে পড়া অটোর ডানপাশে লাগানো রড মুখে ঢুকে মৃত্যু হয় এক প্রৌঢ়ার। এবার সে তালিকায় শুক্রবার সকালে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।