নয়াদিল্লি ও কলকাতা: পাক গুপ্তচর ধরা পড়ার জের। এবার থেকে কলকাতার গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স (জিআরএসই)-এর নিরাপত্তার দায়িত্বে দেখা যাবে কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনীর কম্যান্ডোদের।


কেন্দ্রীয় সূত্রের খবর, খুব শীঘ্রই সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ)-এর ৪০০ জন কম্যান্ডোকে প্রতিরক্ষামন্ত্রকের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষায় দেখা যাবে। সম্প্রতি, এই বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র। জানা গিয়েছে, এই কম্যান্ডোদের হাতে স্বয়ংক্রিয় একে-৪৭ রাইফেল এবং আরও আধুনিক সরঞ্জাম। সর্বক্ষণ তাঁরা এই প্রতিষ্ঠানের বাইরে ও ভিতরে নিরাপত্তা প্রদান করবেন।

ইতিমধ্যেই, জিআরএসই-র মধ্যে সিআইএসএফ-এর জন্য পৃথক ব্যারাক, অস্ত্রাগার ও কন্ট্রোল রুমের নির্মাণ করা হয়েছে। নেতৃত্বে থাকবেন বাহিনীর একজন কম্যান্ডান্ট পদমর্যাদার অফিসার। জানা গিয়েছে, যে কোনও হামলার পরিস্থিতিতে এই বাহিনী কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি)-র ভূমিকা নেবে। অর্থাৎ, অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তার মোকাবিলা করবে।

জিআরএসই থেকে তিন সন্দেহভাজন পাক গুপ্তচর ধরা পড়ার পর এখানকার নিরাপত্তার রুগ্ন অবস্থা প্রকট হয়ে পড়ে। গত বছর ডিসেম্বরে গার্ডেনরিচ থেকেও পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গ্রেফতার করে আশফাক, এরশাদ, জাহাঙ্গির নামে তিনজনকে।

এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই গার্ডেনরিচে তৈরি যুদ্ধজাহাজ সংক্রান্ত নথি পাচারের অভিযোগ ওঠে।  সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ ছিল, এদের মধ্যে এরশাদ হায়দার আনসারি গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্সের কর্মী বলে তদন্তে উঠে আসে। জানা যায়, সে এই প্রতিষ্ঠানে পিয়নের পদে কাজ করত। পাশাপাশি, জাহাজে যন্ত্রাংশ লাগানোর কাজও করত এরশাদ।

এমনকী, ভাল ব্যবহারের ফলে বহু অফিসারের সঙ্গেই তার ভাল সম্পর্ক ছিল।  শুধু তাই নয়, উদ্বেগের বিষয় হল, নৌবাহিনীর অত্যাধুনিক ক্ষেপনাস্ত্র বহনকারী সাবমেরিন-বিধ্বংসী যুদ্ধজাহাজ আইএনএস কদমতের নির্মাণকাজ চলার সময়, তার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল এরশাদ।

গোয়েন্দাদের দাবি, এরশাদের দাদা আইএসআই এজেন্ট ইরফান, এই ফোনটি কিনে দিয়েছিল তাদের। যে ফোন দিয়ে গার্ডেনরিচের জাহাজ কারখানার ভিতরের ছবি তুলে আনত এরশাদ। কখনও সেই মোবাইলের মেমরি চিপ, কখনও আবার ছবির প্রিন্ট নিয়ে গিয়ে ইরফানের হাতে তুলে দিত আশফাক!

বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই দেশের নৌবাহিনীর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এরপরই কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করতে দিল্লিতে যান গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্সের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অবসরপ্রাপ্ত) এ কে ভার্মা।

সেখানে নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা সূত্রে খবর, গার্ডেনরিচ-সহ বন্দর এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা নিয়েও আলোচনা হয়। সেখানেই, নৌসেনা ও উপকূলরক্ষী বাহিনীর জন্য বিভিন্ন জাহাজ নির্মাণকারী এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার খোলনলচে পাল্টে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বাহিনী মোতায়েন নিয়ে গার্ডেনরিচ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

অন্যদিকে, কেরলের তিরুঅনন্তপুরমের কাছে বালিয়ামালায় ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর অন্তর্গত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইআইএসটি)-র নিরাপত্তাতেও ১০০ জন সশস্ত্র সিআইএসএফ জওয়ানকে মোতায়েন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।